বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্বজুড়ে রীতিমত ত্রাস তৈরি করেছে নোভেল করোনা ভাইরাস। চীনের ইউহান শহর থেকে ক্রমশই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য দেশে। যেখানে বাদ যায়নি প্রতিবেশী ভারতও। ইতিমধ্যেই নোভের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে এখানে। বাংলাতেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে এই সন্দেহে এখনও পর্যন্ত ৫৮টি নমুনা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হয়েছে। যদিও কোনও রিপোর্টেই পজিটিভ অর্থাৎ সংক্রমণের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
তবে সংক্রমণ রুখতে তৎপর রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। তাই বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মানুষকে চার ভাবে চিহ্নিতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তারা। জানা গিয়েছে, নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে দেশের মধ্যে এই প্রথম এভাবে সন্দেহজনক রোগীকে চিহ্নিত করা হবে। কদিন আগেই নোভেল করোনা ভাইরাসকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’। পাশাপাশি ‘হু’-এর চিফ টেডরোস জানিয়েছিলেন, সঠিক ভাবে রোগ নির্বাচন, পর্যবেক্ষণ এবং তা রুখে দেওয়ার জন্য সঠিক চিকিৎসা– এই তিন পদ্ধতি সম্মিলিত ভাবেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম হবে। তাই এবার সেই পথেই এগোচ্ছে বাংলার স্বাস্থ্য দফতর।
জানা গেছে, এই ক্ষেত্রে মূলত চারটি ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হবে রোগীদের। এই পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিওর বা এসওপি। শনিবার এই নিয়ে দিনভর বৈঠক চলে স্বাস্থ্য ভবনে। অবশেষে ঠিক হয় যে কারা নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত আর কারা নয়, সে বিষয়ে ক্যাটেগরিক্যালি আলাদা আলাদা ভাবে সাধারণ মানুষকে চিহ্নিত করা হবে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর (ডিএইচএস) কথায়, এই বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক, আশাকর্মী এবং যাঁরা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কাজ করেন তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও শুরু হচ্ছে রবিবার থেকেই। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে তৈরি হয়েছে নির্দেশিকাও।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক স্বাস্থ্য দফতরের নির্ধারিত এই চার ক্যাটেগরি —
ক্যাটেগরি ‘এ’– যাঁদের শরীরে জ্বর-সর্দি-কাশির লক্ষণ রয়েছে এবং সর্বোপরি যাঁরা নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত দেশে সফর করেছেন তাঁদের ‘এ’ ক্যাটেগরির অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এঁদেরকে ‘হাই রিস্ক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে এবং সরকারের তরফে আইসোলেশনে রেখে পর্যবেক্ষণ এবং চিকিৎসা চালানো হবে।
ক্যাটেগরি ‘বি’- যাঁদের সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশ যাত্রা অর্থাৎ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত দেশে যাওয়ার রেকর্ড নেই কিন্তু সর্দি-কাশি-জ্বরের মতো লক্ষণ শরীরে দেখা দিয়েছে তাঁরা এই ক্যাটেগরির অন্তর্ভুক্ত হবে। মূলত ‘মডারেট রিস্ক’ হিসেবে এঁদের চিহ্নিত করা হবে। ৬০ বছরের বেশি বয়স হলে এবং ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা থাকলে তাঁদের এই ক্যাটেগরিতে রাখা হবে। এক্ষেত্রে সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির কোয়ারেন্টাইনের পাশাপাশি তাঁর পরিবারকেও আইসোলেশনে রেখে ১৪ দিন ধরে নজরদারি চালানো হবে।
ক্যাটেগরি ‘সি’- যাঁদের বিদেশ যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে এদিকে শরীরে কোনও লক্ষণই নেই তাঁরা এই ক্যাটেগরিভুক্ত হবেন। আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে ১৪ দিন ধরে নজরদারিও চালানো হবে এঁদের উপরেও।
ক্যাটেগরি ‘ডি’- যাঁদের বিদেশ যাওয়ার কোনও রেকর্ড নেই এবং শরীরে কোনও লক্ষণও নেই তাঁরা এই ক্যাটেগরির অন্তর্ভুক্ত হবেন।