সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) প্রতিবাদে তোলপাড় গোটা দেশ। দিল্লীতে এখনও ধিকিধিকি জ্বলছে হিংসার আগুন। ইতিমধ্যেই সিএএ বিরোধী ও সমর্থনকারীদের মধ্যে হিংসায় বলি হয়েছে ৪৬টি তরতাজা প্রাণ। রবিবারও আরও দুটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে গোকুলপুরী থেকে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও কেন্দ্র যে এক কদমও পিছু হটবে না, রবিবার শহীদ মিনারের সভা থেকে ফের সিএএ-র পক্ষে জোর সওয়াল করে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সিএএ বিরোধিতার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিরোধীদেরও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। গতকালই এর পালটা দিলেন তৃণমূল সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইট করে বিঁধলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
শাহের সভার অনতিবিলম্বেই তিনি টুইটারে লেখেন, ‘আপনার নাকের ডগায় দিল্লীর হিংসা ঘটল। ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছেন। বাংলায় এসে পুজো দেওয়ার থেকেও আপনার উচিত ছিল, সেই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়া ও তার ব্যাখ্যা দেওয়া। অমিত শাহ, বিজেপি যে ধর্মান্ধতা ও ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা করছে, বাংলা সে সব থেকে দূরে রয়েছে।’ তাত্পর্যপূর্ণভাবে গতকালের সভায় রাজ্য সরকারকে নিশানা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নানা কথা বললেও, সাম্প্রতিক দিল্লী হিংসা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি তিনি। শাহকে নিশানা করার জন্য তাই দিল্লীর হিংসার ঘটনাকেই হাতিয়ার করেন অভিষেক।
প্রসঙ্গত, রবিবার শহীদ মিনারের সভা থেকে শাহ বলেন, ‘এই আইন নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য। তা কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশের শরণার্থীদের মোদীজি নাগরিকত্ব দিতে চান। মতুয়া, নমঃশূদ্রদের দেশের নাগরিকের অধিকার দিতে হবে। কিন্তু এসবের বিরোধিতা হচ্ছে। কোন স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর বিরোধিতা করছেন? তাঁকে প্রশ্ন করতে চাই, ওইসব দেশ থেকে আসা শরনার্থীদের কেন আপন মনে হয় না আপনার? কেন অনুপ্রবেশকারীদেরই আপনার আপন বলে মনে হয়? সাফ বলছি, শরনার্থীদের নাগরিকত্ব দিয়েই ছাড়ব। মমতা আমাদের রুখতে পারবেন না।’
শুধু তাই নয়। তাঁর বক্তব্যে অভিষেককেও নিশান করেন শাহ। বলেন, এবার বাংলায় আর কোনও শাহাজাদাকে মুখ্যমন্ত্রী হতে দেওয়া যাবে না। বাংলার মাটি থেকেই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী হবে। তাঁর কথায়, ‘বাংলার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কেবলমাত্র এখানকার কোনও ভূমিপুত্রই হবেন। বিজেপি ক্ষমতায় এসেই তা করবে। কোনও শাহজাদা মুখ্যমন্ত্রী হবেন না।’ শাহজাদা বলতে যে মমতার ভাইপো অভিষেককেই ইঙ্গিত করেছেন শাহ, তা স্পষ্ট। আর তাই ইটের বদলে পাটকেল ছুঁড়তেও দেরি করেননি অভিষেক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উচিৎ জবাব দিতে দিল্লী হিংসার প্রসঙ্গ টেনেই তাঁকে পালটা আক্রমণের পথে হাঁটলেন যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা এই তরুণ সাংসদ।