অধরাই রয়ে গেল বাণিজ্য চুক্তি। ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানকে সন্ত্রাস দমনের বার্তা দিলেন বটে, তবে এও বলে দিলেন, ইসলামাবাদের পদক্ষেপে তাঁরা অখুশি নন। ৩০০ কোটি টাকায় সেনার জন্য হেলিকপ্টার কিনতে মার্কিন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি ছাড়া ট্রাম্পের সফরে কী লাভ হল? প্রশ্ন তুলছে বিরোধি শিবির।
৮ মাসে পাঁচবার মুখোমুখি হলেন নরেন্দ্র মোদী-ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার, দিল্লীর হায়দ্রাবাদ হাউসে শীর্ষ বৈঠকের পর আলোচনার টেবিলে বসলেন দু-দেশের প্রতিনিধিরা। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন রাষ্ট্রপতি দু-জনেই দাবি করলেন, তাঁদের আমলে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক, নানা ক্ষেত্রে সমঝোতা, অন্য উচ্চতায় পৌছেছে। কিন্তু, ট্রাম্পের ভারত সফরের আগে যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি জল্পনা তৈরি হয়েছিল সেবিষয়ে ফলপ্রসূ কিছুই হল না।
ট্রাম্প প্রশাসন জিএসপি-র সুবিধা তুলে নেওয়ায় ২ হাজার ভারতীয় পণ্য আর বিনা শুল্কে মার্কিন মুলুকে ঢুকতে পারছে না। আমেরিকার আপত্তি আবার মোটরবাইক, চিকিৎসা সরঞ্জাম-সহ একাধিক পণ্যে ভারতের চড়া আমদানি শুল্ক নিয়ে। সঙ্ঘ পরিবারের বাধায় মার্কিন কৃষি ও ডেয়ারি পণ্যের বাজারও খুলে দিতে পারছে না দিল্লী।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২ দিনের সফরে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় তাঁর সঙ্গে কাটিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ২ টি মার্কিন সংস্থার কাছ থেকে ৩০০ কোটি ডলারে হেলিকপ্টার কিনতে চুক্তি সই হয়েছে। কিন্তু, সন্ত্রাসের ঘাঁটি হিসাবে পাকিস্তানের নাম নিয়েও সন্ত্রাস দমনে পাক সরকার ইতিবাচক ভূমিকা নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যা কখনই মোদীর পক্ষে স্বস্তিদায়ক নয়। রাজনৈতিক মহল বলছে, ২৯শে ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানে, তালিবানের সঙ্গে মার্কিন বাহিনীর শান্তি চুক্তি হওয়ার কথা। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরলে সেখানে পাকিস্তানের প্রভাব বাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে দিল্লীর। সম্ভাব্য চুক্তির আগে তাই ইসলামাবাদকে নরমে-গরমেই বার্তা দিলেন ট্রাম্প।
মোদী-ট্রাম্প বৈঠকে ৫জি মোবাইল পরিষেবা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সূত্রের খবর, আমেরিকায় নিষিদ্ধ চিনা সংস্থা হুয়েই, ভারতের বাজারে, ৫জি মোবাইল প্রযুক্তি সরবরাহ করুক, তা ট্রাম্প প্রশাসন চায় না। বরং তারা চাইছে, ৫জি মোবাইল পরিষেবায় মার্কিন সংস্থাগুলির জন্য দরজা খুলুক দিল্লী। এমনকি এইচওয়ানবি ভিসা নিয়েও পাকা কথা হয়নি। বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, এইচওয়ানবি ভিসা আলোচনা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পেশাদারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, বহু কোটি টাকা খরচে ট্রাম্পের ভারত সফর বন্ধুত্বের বিজ্ঞাপন হয়েই রয়ে গেল। ‘কোলাকুলি’ বহাল রইল। কিন্তু, লাভের লাভ কতটা হল তা নিয়ে সংশয় থেকেই গেল।