২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে যে ‘প্রতিশ্রুতি’ গুলি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘উজ্জ্বলা যোজনা’। যাতে দেশের সব মানুষের কাছে রান্নার গ্যাসের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যায়। কিন্তু গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে কলকাতায় ভর্তুকিবিহীন গার্হস্থ্য গ্যাস সিলিন্ডারের দাম একলাফে ১৪৯ টাকা বেড়ে ৮৯৬ টাকা হয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনায় কতটা সাফল্য মিলবে তা বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
কারণ, উজ্জ্বলা যোজনায় দরিদ্র পরিবারকে সরকার বিনামূল্যে এলপিজি সংযোগ দিলেও তাদের বাজার দরে রিফিল কিনতে হয়। পরে ভর্তুকির টাকা গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। রিফিলের দাম সাধ্যের বাইরে চলে যাওয়ায় অনেক দরিদ্র পরিবারই গ্যাস ছেড়ে কাঠের মতো অস্বাস্থ্যকর জ্বালানিতে ফিরে যাচ্ছে। এই প্রবণতা বন্ধ করতে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে এসবিআই রিসার্চ।
তারা তাদের সাম্প্রতিক ইকোর্যাপ রিপোর্টে উজ্জ্বলা গ্রাহকদের প্রতি বছর বিনামূল্যে চারটি সিলিন্ডার দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এসবিআই রিসার্চের মতে, এলপিজি সিলিন্ডার কেনার ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষমতা একটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সেই কারণেই সিলিন্ডারের টানা দর বৃদ্ধি দরিদ্র গ্রাহকদের সমস্যা তীব্র করেছে।
উল্লেখ্য, গত আগস্টে কলকাতায় ১৪.২ কিলো সিলিন্ডারের দাম ছিল ৬০১ টাকা, যা চলতি মাসে ৮৯৬ টাকা। অর্থাৎ, ছয় মাসে দাম বেড়েছে ২৯৫ টাকা। উজ্জ্বলা যোজনায় ২০১৮-র ডিসেম্বর পর্যন্ত যে ৫.৯২ কোটি সংযোগ দেওয়া হয়েছে, তার বিশ্লেষণ করে এসবিআই রিসার্চ জানিয়েছে, ২৪.৬ শতাংশ গ্রাহক কখনও রিফিল কেনেননি, ১৭.৯ শতাংশ গ্রাহক বছরে ১ অথবা ২টি রিফিল কিনেছেন এবং ১১.৭ শতাংশ বছরে তিনটি সিলিন্ডার কিনেছেন।
রিপোর্টে এসবিআই রিসার্চ জানিয়েছে, ‘উজ্জ্বলা যোজনার গ্রাহকদের মধ্যে ৫৪.২ শতাংশই বছরে সর্বাধিক তিনটি রিফিল বা তার বেশি কিনেছেন। কিন্তু, যুক্তি বলছে চার-সদস্যের একটি পরিবারের বছরে অন্তত ৩-৪টি সিলিন্ডার লাগে। ফলে, এটা স্পষ্ট, নিয়মিতভাবে উজ্জ্বলা গ্রাহকরা সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন না।’
দরিদ্র পরিবারগুলিকে স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকারক এমন জ্বালানির বদলে গ্যাসে রান্না করাকে উৎসাহ দিতে উজ্জ্বলা যোজনা একটি অসাধারণ পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে এসবিআই রিসার্চ। কিন্তু, যে মূহূর্তে নিখরচায় পাওয়া সিলিন্ডার ফুরিয়ে যাচ্ছে তখন অনেক গ্রাহকই রিফিল করার আর্থিক সাধ্যের অভাবে ফের অস্বাস্থ্যকর কাঠের চুল্লিতে ফিরে যাচ্ছেন।