প্রয়াত বাংলা চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় অভিনেতা তাপস পাল। আজ ভোররাতে জীবনাবসান হয় এই তারকার ।মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। অভিনেতার অকাল প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে টলিউডে।
দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। ভুগছিলেন স্নায়ুর রোগে।এই মাসের শুরুতে মেয়ের কাছে আমেরিকাতে যাওয়ার কথা ছিল তাপসের।কিন্তু তার আগে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ভর্তি হন মুম্বইয়ের হাসপাতালে।রাখা হয়েছিল ভেন্টিলেশনেও। আজ ভোররাতে আচমকাই ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে প্রয়াণ হয় অভিনেতার। তাপসের প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলা ছবিতে তিনি ছিলেন যেন সেই পরিচিত পাশের বাড়ির ছেলে। আজও বাঙালি দর্শক বার বার সেই ‘দাদার কীর্তি’র তাপসকে মনে করেন। সেই ছবিতে প্রবল জনপ্রিয় হয়েছিল তাঁর নিপাট ভালমানুষি, যাঁকে হয়তো আমরা ‘বোকামি’ বলে পরিহাস করে থাকি। কিন্তু যা আজও প্রেমের বার্তা দিয়ে ফেরে। এখানেই বোধহয় তাপস পালের অভিনয়ের দক্ষতা।
তাপস বার বার এমন চরিত্র নির্বাচন করছেন, যা বাংলার তথাকথিত ‘হিরোইজম’কে ভেঙে দিয়েছে। এই স্বাভাবিক, সারল্যই ছিল তাপস পালের ইউএসপি। যে কারণে তাঁর একের পর এক পারিবারিক ছবি হয়ে উঠেছিল তৎকালীন বাংলার ‘কমার্শিয়াল ছবি’। এক দিকে নিপাট সারল্য অন্য দিকে ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে বীরত্ব প্রদর্শন করে নায়িকাকে উদ্ধার। এমন বহু দৃশ্যে তিনি অভিনেতা থেকে স্টার হয়ে উঠেছিলেন। এই কর্মাশিয়াল স্টারকে অভিনয়ের জন্য ডেকেছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মতো পরিচালক। দর্শক দেখেছে ‘উত্তরা’ বা ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ ছবিতে তাঁর অসামান্য অভিনয়।
শুধু কী তাই? তাঁর সহজিয়া অভিনয় তাঁকে আরব সাগরেও টেনে নিয়ে গিয়েছিল। ১৯৮৪তে হীরেন নাগের ছবিতে তাঁর বিপরীতে নায়িকা ছিলেন মাধুরী দীক্ষিত। রাখি গুলজারের সঙ্গেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু তাপস পাল পুরোদস্তুর বাংলার অভিনেতা। কলকাতায় তরুণ মজুমদারের ডাকে মুম্বই থেকে কলকাতা ফিরে এসে দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে অভিনয় করেন ‘ভালবাসা ভালবাসা’ ছবিতে। ১৯৮৫-তে এই ছবি বক্স অফিসে বিপুল সাফল্য এনে দেয়।
বাংলা ছবিতে তৈরি হয় দেবশ্রী-তাপস জুটি। একে একে বাড়তে থাকে ছবির তালিকা। ‘অর্পণ’, ‘সুরের সাথী’, ‘সুরের আকাশে’, ‘নয়নমণি’, ‘চোখের আলোয়’, ‘তবু মনে রেখো’। তপন সিংহ থেকে অঞ্জন চৌধুরী, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় থেকে তরুণ মজুমদার আশি থেকে নব্বই দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের প্রেম, অভিমান, অনুরাগ এবং লড়াই— বাঙালির সমস্ত আবেগের মিশেল সেই তাপস পাল।
পরবর্তী কালে তিনি তৃণমূলের সাংসদও হন। রুপোলি পর্দার নায়ক থেকে সংসদের গণ্ডিতে। ২০০৯ সালে মোড় ঘুরে যায় তাপস পালের অভিনেতা জীবনে। ওই বছর রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের টিকিটে কৃষ্ণনগর থেকে জিতে সাংসদ হন তাপস পাল।
তাপসের প্রয়াণে শোকের ছায়া টলিউডে। অভিনেতা চিরঞ্জিত বলেছেন “ভাইকে হারালাম”। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দেবশ্রী রায়ও। এখনও এই সংবাদ কার্যত বিশ্বাস করতে পারছেন না অভিনেত্রী এবং তাপস পালের প্রতিবেশী ইন্দ্রাণী দত্ত। সামনেই দোল। বসন্তের মন কেমন করা হাওয়ায় ভরে গিয়েছে শহর। ‘দাদার কীর্তি’র ‘কেদার’ আবার পথে নামবেন রং মাখতে। কিন্তু বাস্তব ‘কেদারের’ জীবনে ইতি টেনে দিল এই বসন্ত।