মাঝেমধ্যেই নানা ঘটনা, দুর্ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যতই সভ্যতার বড়াই করি না কেন, আমরা এখনও কুসংস্কার মুক্ত হইনি। যেমন দুদিন আগে গুণিনের ঝাড়ফুঁকে মালদায় দুটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনা। কুসংস্কারাছন্ন মানুষ গুণিনের বদলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে শিশুদুটি বেঁচে যেত। এমন ঘটনা শুধু দূর গ্রামে ঘটে তাই নয়, শহরেও ঘটে। নানা ব্যাপারে আমরা আমাদের কুসংস্কারাছন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারা, বাস্তবতাকে অস্বীকার করাও একধরণের কুসংস্কার। এমন ঘটনা কিন্তু আমরা হামেশাই ঘটতে দেখি।
যেমন ধরুন, দেশের প্রায় প্রতিটি প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের পাশাপাশি চিত্রসাংবাদিকদেরও ক্লাবের সদস্যপদ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রেস ক্লাব, কলকাতায় আলাদা নিয়ম। এখানে তারা শুধুমাত্র অ্যাসোসিয়েট মেম্বার, সাধারণ সদস্য নন। কেন এই নিয়ম জিজ্ঞেস করলে বলা হয়, আমাদের এখানে এই নিয়মটাই চলে আসছে। অথচ আপনারা সবাই জানেন পেশাগত ক্ষেত্রে সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকদের একসঙ্গেই কাজ করতে হয়। পেশাগত ঝুঁকি ও পরিশ্রম উভয়েরই সমান। এই যুক্তিতে দেশের অন্যান্য প্রেস ক্লাবে চিত্রসাংবাদিকদের সদস্য করা হয়েছে। কোন জায়গাতেই এটা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু প্রেস ক্লাব, কলকাতা দীর্ঘদিন ধরে এই নিয়ম চালু আছে, প্রতিষ্ঠাতারা এ নিয়ম চালু করেছিলেন এমন সব কুযুক্তি দেখিয়ে এই ব্যাপারটা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে চিত্রসাংবাদিকদের ক্লাবের সদস্য করার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রেস ক্লাব নিজেদের বক্তব্যও জানিয়েছেন, তবুও এই অচলায়তন ভাঙছে না। আমার মনে হয়, এটাও একধরণের কুসংস্কার। এই সিদ্ধান্তে অটল থাকার পিছনে আর যাইহোক কোন বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি নেই।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই বৈষম্যের ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিলেন। গত বছরের ২৩শে জুলাই ক্লাবের ৭৫ বছর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ক্লাবে এসে তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়েছিলেন, “দেশের সব প্রেস ক্লাবে চিত্রসাংবাদিকরা ক্লাবের মেম্বার। সারা ভারতবর্ষে যদি নিয়মটা থাকে তাহলে এখানে থাকবে না কেন? ক্লাবের ৭৫ বছরে অন্তত একটা অ্যামেন্ডমেন্ট করে চিত্রসাংবাদিকদের মেম্বার করা হোক। ওরা যদি মেম্বার না হতে পারেন তাহলে অ্যাক্রিডেশন, পেনশন, ক্যামেরা ইত্যাদির অ্যাডভান্টেজ পেতে অসুবিধা হবে। তারা যেন তাদের ন্যায্য অধিকার পান।” ক্লাব কর্তৃপক্ষ তখন ব্যাপারটা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই আশ্বাস এখনও কাজে পরিণত হয়নি। আমরা এখনও ক্লাবের সদস্য নই।
কেন আপনাদের এই নীরবতা তা আমরা জানিনা। বারবার বঞ্চিত হতে হতে চিত্রসাংবাদিকরা যদি একটা আলাদা ক্লাব করেন তাহলে সেটা একটা বাজে দৃষ্টান্ত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। আমরা তা চাইও না, আমরা শুধু চাইছি বিষয়টার প্রতি একটু সংবেদনশীল হোন। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেটুকুকে অন্তত সন্মান দিন। সাংবাদিকরা ছুঁৎমার্গের বিরুদ্ধে এত কথা বলেন তাহলে তাদের ক্লাবেই এত ছুঁৎমার্গ থাকবে কেন? আপনাদের শুভবুদ্ধির প্রতি আমাদের আস্থা আছে বলেই আগের বছর ক্লাবের বার্ষিক অধিবেশনে কিছু সদস্যের প্ররোচনামূলক মন্তব্যেও আমরা নীরব ছিলাম। ক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদক স্নেহাশিস, কিংশুক সহ অন্যান্য সদস্যরা এমন আচরণের নিন্দা করে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আমরা এখনও ক্লাব কর্তাদের ওপর আস্থা রাখি। আর আস্থা রাখি বলেই চাইছি আপনারা এব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন।
কুসংস্কার সর্বত্র বর্জনীয়। চিত্রসাংবাদিকদের ক্লাব সদস্য না করার কুসংস্কার দূর হোক।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত