দু’হাতে দশদিক সামলাতে সিদ্ধহস্ত তিনি। একদিকে রাজনীতিও করেন। আবার পাশাপাশি চালিয়ে যান সাহিত্য চর্চাও। গল্প-উপন্যাস-কবিতা- সাহিত্যের সমস্ত ক্ষেত্রেই তাঁর অবাধ আনাগোনা। ফি বছরই বইমেলার প্রকাশ পায় তাঁর নতুন নতুন বই। তিনি আর কেউ নন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। গত বইমেলা পর্যন্ত বই লেখার ইনিংসে তাঁর ব্যাটে রান ছিল ৮৮। কথা দিয়েছিলেন, এ বছর ‘সেঞ্চুরি’ করে ফেলবেন। যেমন কথা তেমনি কাজ। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার ৪৪তম বছরে নিজের লেখা নতুন ১৩টি বই পাঠকদের উপহার দিলেন মমতা। তার মধ্যে রয়েছে ৯৪৬টি কবিতা নিয়ে ‘কবিতা বিতান’-সহ ছ’টি বাংলা, ছ’টি ইংরেজি, একটি উর্দু বই।
মঙ্গলবার বইমেলার উদ্বোধন করে মমতা বলেন, ‘কেউ বাংলা, কেউ ইংরেজি, কেউ হিন্দি, তামিল, উর্দুতে লিখবেন, এটাই বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। উর্দুতে লেখা বই বলে বা তামিলে লেখা বই বলে তাকে মেনে নেবেন না?’ বাংলার সঙ্গে আরও ভাষা চর্চার পক্ষে সওয়াল করেন মুখ্যমন্ত্রী। ৪৪তম বইমেলার উদ্বোধক দেশের রুশ রাষ্ট্রদূত কুদাশেভ নিকোলাই রিশাতোভিচ-সহ রুশ অতিথিদের তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন রুশ ভাষায়। তবে মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন বইয়ে মূল সুর হিসেবে ছায়া ফেলেছে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। ‘নাগরিক’, ‘মানুষের জন্য উন্নয়নের লক্ষ্যে’ কিংবা উর্দু শায়েরির বই ‘হিম্মত’-এ সেই প্রসঙ্গ এসেছে। ‘হোয়াই উই আর সেয়িং নো সিএএ, নো এনআরসি, নো এনপিআর’ শিরোনামে ইংরেজিতে ছোট বইও লিখেছেন তিনি।
গতকাল বইমেলার সঙ্গে তাঁর আবেগের বন্ধনের কথাও বারবার বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, কীভাবে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, মহাশ্বেতাদেবী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পী-সাহিত্যিকদের কথা তাঁর মনে পড়ছে! অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রাপ্ত লেখক-গবেষক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীকে বইমেলার বিবর্তন নিয়ে লিখতেও অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ইন্টারনেটের যুগেও নিজের লেখা এবং মনের ভাব প্রকাশের আনন্দ তাঁর কাছে একেবারে অনন্য, সে কথাও বলতে ভোলেননি মুখ্যমন্ত্রী। গতকাল কলকাতা পুলিশের স্টলেরও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে চন্দননগর কমিশনারেটের নগরপাল হুমায়ুন কবিরের লেখা ‘উত্তরণ’ এবং কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত নগরপাল সুপ্রতিম সরকারের লেখা ‘আবার গোয়েন্দাপীঠ’ বই দুটির উদ্বোধন করেন তিনি।