আনন্দধারা প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যে সামাজিক বিপ্লব তৈরি হয়েছে। বুধবার শিলিগুড়িতে ২৩টি জেলার মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে নিয়ে আয়োজিত জাতীয় স্তরের সরস মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। অন্যদিকে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পঞ্চায়েতমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন বামফ্রন্ট শাসিত শিলিগুড়ি পুরসভার সভাধিপতি তাপস সরকার। আসন্ন শিলিগুড়ি মহকুমা ভোটের মুখে এটা তৃণমূলের কাছে বড় অস্ত্র বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
মেলার উদ্বোধন করার পর গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী বলেন, একদা স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠনের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে পিছনের সারিতে ছিল এই রাজ্য। সেই সময় রাজ্যে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ১৫০০টির মতো। বর্তমানে রাজ্যে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা ৮ লক্ষ ২৬ হাজার ৪৮৫টি। এরসঙ্গে যুক্ত ৮৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ৭৯০টি পরিবার। লক্ষ লক্ষ মহিলা ব্যাঙ্কের থেকে ঋণ নিয়ে হস্তশিল্প তৈরি করে স্বনির্ভর হয়েছেন। সুষ্ঠুমতো সংসার চালাচ্ছেন। এখানকার মেয়েরা হাসপাতাল, স্কুল, পথেরসাথী সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কাজের সঙ্গেও যুক্ত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিঃশব্দে রাজ্যে সামাজিক বিপ্লব তৈরি হয়েছে। এখানে রাজনৈতিক কোনও সংকীর্ণতা নেই। এই কাজ ঠিকমতো করতে পারলে উন্নত সমাজ গড়তে পারব। তাছাড়া স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠনে বর্তমানে আমরা দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছি।
এদিন কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হস্তশিল্প নিয়ে জাতীয় স্তরের মেলা শুরু হয়। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘সরস মেলা’। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগ আয়োজিত এই মেলা ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এখানে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, হাওড়া সহ রাজ্যের ২৩টি জেলা থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা হস্তশিল্প সামগ্রী নিয়ে এসেছেন।
স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে রাজ্যে পিছিয়ে পড়া অসংখ্যা মহিলা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ওই মহিলাদের কেউ পাটের বিভিন্ন ডিজাইনের ব্যাগ, কেউ শীল পাটির উপকরণ, মাটির পুতুল, মূর্তি আবার কেউ চাল উৎপাদন করেন। আবার কেউ কেউ হাঁস, মুরগি, ছাগল পালন করে স্বনির্ভর হয়েছেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, গত আর্থিক বছর স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ বাবদ ৮৫০০কোটি টাকা প্রদান করেছিল ব্যাঙ্ক। এবার ব্যাঙ্ক ঋণ প্রদানের টার্গেট বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যে ৬ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫২টি গোষ্ঠীর মধ্যে ৮৭১৮ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকার মতো ব্যাঙ্ক ঋণ প্রদান করা হয়েছে। দু’মাসের মধ্যে টার্গেট পূরণ হয়ে যাবে বলে পঞ্চায়েত বিভাগের আধিকারিকদের আশা।