বাংলার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সাধারণ মানুষকে দু’হাত ভরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার উদ্যোগেই একাধিক উন্নয়ন হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। বাংলার সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েদের বৃত্তি দিতে তিনি চালু করেছেন ‘ঐক্যশ্রী’ প্রকল্প। রাজ্যজুড়ে সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রকল্প ‘ঐক্যশ্রী’তে প্রায় সাড়ে ৪৬ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে।
এই প্রকল্প চলতি আর্থিক বছর থেকে শুরু হয়েছে। প্রায় ৬০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল, সংখ্যালঘু মেধাবী-দুঃস্থ পড়ুয়াদের পড়াশুনা চালিয়ে যেতে সরকারি সহায়তা করা। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের এই ধরনের বিশেষ স্কলারশিপ থাকলেও গত দু’টি অর্থবর্ষে বিবিধ কারণ দেখিয়ে রাজ্যের প্রায় ৪৪ লক্ষ সংখ্যালঘু পড়ুয়ার আবেদনপত্র খারিজ করা হয়েছে। যার জেরে প্রবল সমস্যায় পড়েছিল লক্ষ লক্ষ গরিব পরিবার। জেলায় জেলায় মারাত্মক ক্ষোভও তৈরি হয়েছিল। তারপরই মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন, কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এককভাবে সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াবে। সেই লক্ষ্যেই ‘ঐক্যশ্রী’ প্রকল্প চালু করেন তিনি। বিভাগীয় দপ্তরের অধীনে থাকা পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের (ডব্লুবিএমডিএফসি) দ্বারা গোটা প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান পি বি সেলিম বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের জন্য রাজ্যজুড়ে ৪৬ লক্ষের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এই মুহূর্তে আবেদনপত্র খতিয়ে দেখার কাজ চলছে। পাশাপাশি যোগ্য পড়ুয়াদের স্কলারশিপ দেওয়াও শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আর্থিকভাবে দূর্বল ও মেধাবী প্রত্যেকটি যোগ্য সংখ্যালঘু পড়ুয়াকে এই স্কলারশিপ দেওয়া হবে। জানা গিয়েছে, রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের তরফে বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে এই পড়ুয়াদের বাছাই করার কাজ চলছে।
মূলত তিনটি পর্যায়ে এই সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের জন্য স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে। প্রথমত, প্রি-ম্যাট্রিক অর্থাৎ প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী। দ্বিতীয়ত, পোস্ট-ম্যাট্রিক অর্থাৎ একাদশ থেকে উচ্চশিক্ষা। তৃতীয়ত, মূলত কারিগরি তথা দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের জন্য সহায়তা। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের একই রকমের প্রকল্প রয়েছে। যার নাম ‘ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টাল’। অভিযোগ, গত দু’টি অর্থবর্ষে রাজ্য থেকে প্রায় ৩০ লক্ষের বেশি আবেদন জমা পড়েছিল সেই স্কলারশিপ পেতে। যার মধ্যে মাত্র সাত লক্ষের মতো আবেদন গৃহীত হয়েছে। রাজ্যের অভিযোগ, নানা বাহানায় বাকি ২৩ লক্ষের মতো আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল মোদী সরকার। এনিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে একাধিকবার আর্জি জানানো হলেও তাতে বিশেষ কর্ণপাত করা হয়নি। এমনকী আবেদন খারিজ হওয়া প্রায় ৭০ শতাংশ ছেলেমেয়ের নামের তালিকা দিল্লির কাছে চাওয়া হয়। পরিকল্পনা ছিল– বাদ পড়া পড়ুয়াদের স্কলারশিপের টাকা দেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
নবান্ন সূত্রের দাবি, মোদী সরকারের তরফে এই প্রসঙ্গে কোন তথ্যও জানানো হয়নি। পরপর দু’টি অর্থবর্ষে একই চিত্র ধরা পড়ায় বাধ্য হয়ে নবান্ন সিদ্ধান্ত নেয়, এককভাবে বাংলার সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের আর্থিক সহায়তা দেবে রাজ্য সরকার।