গত বছর স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরিবার পরিকল্পনাকে ‘দেশপ্রেম’-এর সঙ্গে জুড়েছিলেন। প্রত্যেককে পরিবার ছোট রাখার ফরমান জারি করেছিলেন। নীতি আয়োগও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার খসড়া পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে। আর অন্যান্য ক্ষেত্রের মত এই ক্ষেত্রেও জুড়ে গেল মোদীর ধর্মীয় বিভাজনের নীতি।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দু’দিন আগে জানা যায় যে, উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে আরএসএসের এক রুদ্ধদ্বার আলোচনা-পর্বে স্বয়ং সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত বলেছেন, ‘‘জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণই সঙ্ঘের পরবর্তী কর্মসূচি। দুই সন্তান নীতি নিয়ে সরকারের আইন প্রণয়ন করা উচিত।’’ বিরোধীরা পাল্টা বলেন, ‘‘মোহন ভাগবত দুই সন্তান নীতির কথা বলছেন। কত জনকে রোজগার দিচ্ছেন, সেটা বলুন না!’’ কিন্তু বরেলীতে সুর বদলে ভাগবতই বলেছেন, ‘‘দুই সন্তান নীতির কথা আমি বলিনি। আমি শুধু বলেছি, সঙ্ঘের একটা প্রস্তাব আছে। আমার বক্তব্য, জনসংখ্যা যেমন দেশের কাছে সম্পদ, তেমনই সমস্যাও। তাই সকলের সঙ্গে কথা বলে সরকারের জনসংখ্যা নীতি তৈরি করা উচিত। সকলের সম্মতিতেই স্থির হবে, কত সন্তান হওয়া উচিত।’’
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, শিক্ষার হার, আয় বাড়লেই পরিবার পরিকল্পনার প্রভাব দেখা যায়। প্রতিটি জনগণনাতেই দেখা যাচ্ছে, হিন্দুদের মতোই মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমশ কমে আসছে। ফলে এ দেশে হিন্দুদের সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার কোনও আশঙ্কা আদৌ নেই। মুসলিমদের পুরুষ-নারীর অনুপাতও বেড়েছে।
জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা হলে স্বাভাবিক ভাবেই মেরুকরণের বিষয় উস্কে দেওয়া হবে, ফের হিন্দু-মুসলিম বিতর্ক বাধবে— বিরোধী শিবিরে এমন আশঙ্কা ছিলই। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, বিজেপি-আরএসএসের সমস্যাই হল, সব বিষয়ে মেরুকরণ করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। শুধু কিছু বিশেষ গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেই ‘ভারতীয় বংশোদ্ভূত’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে সঙ্ঘ নিজেদের অভিসন্ধি বুঝিয়ে দিয়েছে। সেই কারণে এখন নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (এনপিআর) নিয়ে সরকারকে ভরসা করছে না আমজনতা।’’