গত বছর লোকসভা নির্বাচন এবং চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে বিজেপি খরচ করেছে ১,২৬৪ কোটি টাকা! পাঁচ বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে সেই খরচের পরিমাণ ছিল ৭১৪ কোটি। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় দলের নির্বাচনী প্রচারের খরচ বেড়েছে ৭৭ শতাংশ।
দেশের অর্থনীতির অবস্থা নড়বড়ে হলেও বিজেপির ‘অর্থনীতি’র মিটার উঠছে চড়চড় করে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস জানিয়েছে, বিজেপির হাত ধরে সূচনা হওয়া নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমেই ফুলেফেঁপে উঠেছে গেরুয়া শিবিরের রাজকোষ। বিতর্কিত এই নির্বাচনী বন্ডের আয়ের নিরিখে বাকি দলগুলির থেকে কয়েক গুণে এগিয়ে রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি।
গত লোকসভা ভোটের আগেই এই বন্ডের সূচনা করে বিজেপি। সেই নির্বাচনী বন্ড থেকেই লোকসভা ভোটের আগে ১,৪৫০ কোটি টাকা ঢুকেছে বিজেপির পকেটে!এই বন্ড সহ অন্যান্য উপার্জন মিলিয়ে ২০১৮-১৯ সালে প্রায় ২,৩৫৪ কোটি টাকা আয় হয়েছে বিজেপির।
নির্বাচনে কমিশনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি খরচ করেছে ১,০৭৮ কোটি এবং দলীয় প্রার্থীদের জন্য খরচ করেছে ১৮৬.৫ কোটি টাকা। দলীয় প্রার্থীদের জন্য খরচের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া টাকা। তার পরিমাণ ৬.৩৩ লক্ষ টাকা। নির্বাচনী প্রচারের জন্য ৪৬ লক্ষ টাকা এবং বিভিন্ন জনসভার জন্য ৯.৯১ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাতে ২.৫২ কোটি খরচ হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে গত বছর প্রচুর তারকাকে নামিয়েছিল বিজেপি। তাঁদের জন্য বিজেপির খরচ হয়েছে ১৭৫.৬৮ কোটি টাকা। মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন বাবদ খরচ হয়েছে ৩২৫ কোটি টাকা।
গত বছর এপ্রিল-মে মাসে লোকসভার পাশাপাশি চার রাজ্য বিধানসভা ভোটও ছিল। অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশে নির্বাচনী প্রচারের জন্য রাজ্য নেতৃত্বকে পাঠানো হয়েছিল ৬৫১ কোটি টাকা। এদিকে, খরচ যেমন হয়েছে বিজেপির আয়ও বেড়েছে গতবছর। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে বিজেপির আয় হয়েছে ২,৪১০ কোটি টাকা। যা তার আগের বছরের চেয়ে ১৩৪ শতাংশ বেশি। সেদিক থেকে গেরুয়া শিবিরের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে কংগ্রেস। গত লোকসভা নির্বাচনে প্রচারের জন্য তাদের খরচ হয়েছে ৮২৯ কোটি টাকা। আর ২০১৪ সালে সেই সংখ্যাটা ছিল ৫১৬ কোটি।
অন্যদিকে কংগ্রেসের আর্থিক সুদিন এখনও ফিরতে দেখা যাচ্ছে না। খুব তাড়াতাড়ি ফিরবে এমনটা মনেও করা যাচ্ছে না। ২০১৮-১৯ সালে কংগ্রেসের আয় হয়েছে ৯১৮.০৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৮৩.২৬ কোটি টাকা এসেছে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে। বোঝাই যাচ্ছে, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিজেপির ইনকাম কংগ্রেসের থেকে প্রায় তিনগুণ বেশি।
২০১৭- ১৮ সালের সাধারণ বাজেটে এই নির্বাচনী বন্ডের কথা বলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তার জন্য অর্থবিলের মাধ্যমে রিজার্ভ ব্যাংকের আইনও সংশোধন করা হয়। এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে নিজের পরিচয় গোপন রেখেই রাজনৈতিক দলগুলিকে আর্থিক অনুদান দেওয়া যায়। রিজার্ভ ব্যাংকের তরফে আপত্তি জানানো হয়েছিল এই বন্ডের। কিন্তু সরকার তাতে তোয়াক্কা করেনি। মোদী-শাহের ইচ্ছাকেই শেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।