নতুন বছরের শুরুতেই জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর) নিয়ে নতুন করে ধোঁয়াশা তৈরি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছিল, এনপিআরের কাজেও লাগবে বায়োমেট্রিক তথ্য। আর তারপর সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েই মোদী সরকার জানিয়ে দেয়, জনগণনা ও এনপিআরের কাজ করতে না চাইলে যে কোনও রাজ্য সরকারি আধিকারিকের ৩ বছরের জেল হতে পারে। যদিও তারপরেও নিজেদের পূর্ব অবস্থান থেকে সরে না এসে এনপিআর প্রক্রিয়া বন্ধই রেখেছে বাংলা ও কেরালা। কিন্তু এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার আরেকটি প্রাক জনগণনা প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করল কেন্দ্র।
তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, সেখানে জানতে চাওয়া হবে পারিবারিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ, যাতে রয়েছে আপনি কোন খাদ্যশস্য খান, সেই তথ্যও। শুধু তাই নয়। ২০২১ সালের জনগণনার জন্য আরও কয়েকটি নতুন তথ্য জানতে চাওয়া হবে। এই প্রথমবার জানতে চাওয়া হবে, আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করেন কিনা, পাইপ গ্যাসের কানেকশন আছে কিনা এবং আপনার মোবাইল ফোনের নম্বর। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মোবাইল নম্বর জানতে চাওয়া হবে কেবলমাত্র জনগণনা সংক্রান্ত কাজের জন্যই। তবে এ নিয়ে নতুন করে দানা বেঁধেছে বিতর্ক।
প্রসঙ্গত, এ বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর অবধি জনগণনার কাজে বাড়ি বাড়ি তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া এবং এনপিআর আপডেট করার কাজ সমান্তরালভাবে চলবে। মূল জনগণনা প্রক্রিয়া হবে ২০২১ সালের ৯ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা ২০২১ সালের জনগণনা এবং এনপিআর আপডেট করার ওই প্রক্রিয়ায় সিলমোহর দেওয়ার ২ সপ্তাহের মধ্যে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের বিজ্ঞপ্তিটি জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রেজিস্ট্রার জেনারেল। সেখানে বলা হয়েছে, ৩১ টি বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হবে। গত জনগণনায় যা ছিল ৩০ টি এবং সেখানে কোন খাদ্যশস্য গ্রহণ করা হয়, তা জানতে চাওয়া হয়নি।
অন্যান্যবারের সঙ্গে আসন্ন জনগণনা প্রক্রিয়ার আরও একটি বৈশিষ্টগত পার্থক্য রয়েছে। এবার কোনও বাড়িতে ব্যাঙ্কিং সার্ভিস বা ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে কিনা, তা জানতে চাওয়া হচ্ছে না। এবার সেই পংক্তিটিই অনুপস্থিত। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রস্তাব অনুযায়ী, এনপিআর প্রক্রিয়ায় ২১ টি পয়েন্টে ডেমোগ্রাফিক বা জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত। সেই পয়েন্টগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, মা-বাবার জন্মের তারিখ এবং জন্মের স্থান, শেষ বাসস্থান, প্যান, আধার, ভোটার আই কার্ডের নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর এবং মোবাইল নম্বর।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে শেষ এনপিআরে তথ্য চাওয়া হয়েছিল ১৫ টি পয়েন্টের উপর। তাতে মা-বাবার জন্মের তারিখ ও জন্মস্থান এবং শেষ বাসস্থান সংক্রান্ত কোনও তথ্য জানতে চাওয়া হয়নি। এবার সেই তথ্যও জানতে চাইছে কেন্দ্র। এনপিআর আপডেটের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে গোটা দেশে উত্তাপ ছড়িয়েছে। নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদের পাশাপাশি জনমানসে এই ধারণা তৈরি হয়েছে, এনপিআর করে আসলে জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর কাজ করতে চায় কেন্দ্র। একই অভিযোগ দেশের বিরোধীদেরও।