বাংলায় চলতে থাকা উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে এবার এক নতুন মাইলফলক গড়ল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সম্প্রতি সামাজিক সুরক্ষা যোজনায় প্রায় ২৯ লক্ষ শ্রমিককে ১৬৩০ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা দিয়ে নয়া দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে রাজ্য।
৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত ১ কোটি ১৭ লক্ষ শ্রমিকের নাম রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের ধাপে ধাপে সুবিধা দেওয়া হবে। জানুয়ারি মাসজুড়েই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মেলা চলবে। মেলা চলাকালীন বেশ কিছু শ্রমিককে সহায়তা দেওয়া হবে।
জানা গিয়েছে, প্রকল্পের নাম রেজিস্ট্রেশনে মুর্শিদাবাদ জেলা শীর্ষে রয়েছে। আর প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে মালদা জেলা। এই জেলার ৪ লক্ষ ৯৪ হাজার শ্রমিককে ২৯৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা। এখানে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার ৫৫৮ জন শ্রমিক ১৪৬ কোটি ৮২ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা পেয়েছেন। এই দুই জেলায় নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি।
বহরমপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট লেবার কমিশনার তুহিনশুভ্র মজুমদার বলেন, শ্রমিক মেলায় আমাদের আরও প্রায় আড়াই কোটি টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। জেলায় ১১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৮৮০ জন শ্রমিকের নাম রেজিস্ট্রেশন হয়ে রয়েছে।
শ্রম দফতর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরে ২ লক্ষ ৩ হাজার শ্রমিক সহায়তা পেয়েছেন। তাঁরা প্রায় ১২৫ কোটি কোটি টাকা পেয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ২ লক্ষ ৪৩ হাজার শ্রমিক ১৪০ কোটি টাকা পেয়েছেন। বীরভূমে ১ লক্ষ ৮ হাজার শ্রমিক ৬০ কোটি টাকা পেয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনার ১ লক্ষ ৪১ হাজার শ্রমিককে ৮৯ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। এভাবে সব জেলাতেই বহু শ্রমিক উপকৃত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সামাজিক সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভবিষ্যনিধি, মৃত্যু এবং দুর্ঘটনার জন্য শ্রমিকরা সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। এই প্রকল্পে রাজমিস্ত্রি, মুটে, রিকশ চালক, পরিচারিকা, বিড়ি শ্রমিকরাও সুবিধা পেয়ে থাকেন। মুর্শিদাবাদে বিড়ি এবং রাজমিস্ত্রি শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। এই দুই ধরনের বহু শ্রমিকই উপকৃত হয়েছেন।
প্রশাসনিক আধিকারিকদের দাবি, রাজ্যে পালাবদলের পর এই দফতরের ভোল বদলে গিয়েছে। এখন অনলাইনেও এই প্রকল্পে নাম রেজিস্ট্রেশন করা যায়। তাছাড়া রাজ্যে জেলাগুলিতে মেলা করেও শ্রমিকদের সচেতন করা হয়। এবারও প্রতিটি জেলায় তিনদিন ধরে মেলা হবে। ২-৪ জানুয়ারি কলকাতায় মেলা চলবে। ডোমকলে ১৭-১৯ জানুয়ারি মেলা হবে। আলিপুরে ২০-২২ জানুয়ারি মেলা চলবে।
জানা গিয়েছে, এই মেলাগুলির মধ্যে কোনও মেলার উদ্বোধন করবেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, আবার কোনও মেলা শ্রম দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, নির্মল মাজি এবং গোলাম রব্বানিরা উদ্বোধন করবেন। চলতি বছরেও বিভিন্ন সময়ে রেজিস্ট্রেশন হয়ে থাকা বহু শ্রমিক এই প্রকল্পে সুবিধা পাবেন।
এক আধিকারিক বলেন, সামাজিক সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত থাকলে শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েরাও পড়াশোনায় অর্থ সাহায্য পাচ্ছে। এরফলে বহু গরিব বাড়ির ছেলেমেয়েও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া আগে কোনও শ্রমিক দুর্ঘটনার কবলে পড়লে তাঁর পরিবারকে সমস্যায় পড়তে হত। কিন্তু, এই প্রকল্পে দুর্ঘটনাগ্রস্ত শ্রমিকের পরিবার সবরকম সুবিধা পেয়ে থাকেন।
রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, আগে এই দফতর সম্পর্কে বহু শ্রমিকই জানতেন না। কিন্তু, আমাদের সরকার আসার পর থেকে শ্রমিকদের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পে এর মধ্যেই বহু শ্রমিক উপকৃত হয়েছেন। আগামী দিনে আরও অনেক শ্রমিক সুবিধা পাবেন। কলকাতা থেকে দার্জিলিং সব জায়গাতেই মেলা করে করে শ্রমিকদের সচেতন করা হবে।