প্রস্তাবিত কোনও কাজই ফেলে রাখা পছন্দ করেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই নির্বাচনের সময় রাজ্যবাসীকে দেওয়া সমস্ত প্রতিশ্রুতিই প্রায় পূরণ করেছেন। তবে যেটুকু বাকি রয়েছে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগেই সেই কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলতে চান তিনি। আর তাই প্রশাসনিক কাজে নজরদারি আরও কড়া করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মাসে মাসে প্রতিটি দফতরকে তাদের প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক কাজের বিস্তারিত খতিয়ান মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে (সিএমও) পেশ করতে নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
এবার থেকে বিভাগীয় স্তরে আর্থিক হালহকিকত বা উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি থেকে শুরু করে কর্মীদের হাজিরা-নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলার খুঁটিনাটি সবকিছুই প্রতি মাসে পাঠাতে হবে সিএমওতে। ওই একই রিপোর্ট পাঠাতে হবে মুখ্যসচিবকেও। এক কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর দিশা অনুযায়ী রাজ্যের সব অংশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যকে পাখির চোখ করে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে পুঙ্খানুপুঙ্খ নজর রাখার কাজে নবান্ন কোনও ফাঁক রাখছে না বলেই সরকারি কর্তাদের অভিমত।
২৭ ডিসেম্বর এই মর্মে মুখ্যসচিব বিভাগীয় সচিবদের একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। সেই চিঠির গোড়াতেই জানানো হয়েছে যে, দপ্তরগুলি মাসিক প্রশাসনিক রিপোর্ট দেবে সিএমও-তে। তাতে প্রথম নির্দেশ আর্থিক ব্যয়ের খতিয়ানের উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিটি দফতরকে যে আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মাসে তার কতটা খরচ করা গেল, সেই হিসাব মাসিক প্রশাসনিক রিপোর্টে দিতে হবে।’
উল্লেখ্য, বিভিন্ন জেলায় ও নবান্নে আয়োজিত প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়টির উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বারবার নির্দেশ দিয়েছেন যে, দফতরগুলি যেন রাজ্যে উন্নয়নের স্বার্থে দফতরগুলি বরাদ্দ অর্থ সময়মতো খরচ করে। তাঁর সেই নির্দেশই প্রতিফলিত হয়েছে মুখ্যসচিবের চিঠিতে। রাজ্য সরকার প্রতি বছরের গোড়াতেই দফতরগুলির বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প ও কাজের সময়সীমা বেঁধে প্রশাসনিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করে। মুখ্যসচিব তাঁর চিঠিতে সেই কাজ দফতরওয়াড়ি কতটা এগোল, তার রিপোর্টও মাসিক রিপোর্টে সংযোজন করতে বলেছেন।
শুধু তাই নয়। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন অগ্রগণ্য বা ‘ফ্ল্যাগশিপ’ প্রকল্প ও নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের মাসিক অগ্রগতিও তাতে দিতে হবে। নিতান্তই গতে বাঁধা আমলাতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির লৌহকপাট থেকে মুক্ত করে প্রশাসনকে যে আরও জনমুখী ও সংবেদনশীলও করে তুলতে চায় নবান্ন, তার ইঙ্গিত মিলেছে এই গুরুত্বপূর্ণ চিঠিতে। কারণ, বিভাগীয় সচিবদের সংশ্লিষ্ট মাসটিতে তাঁদের দপ্তরে প্রশাসনিক সংস্কার বা নয়া কোনও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার দিশা মিলেছে কি না, সেই বিষয়েও মাসিক প্রশাসনিক রিপোর্টে আলোকপাত করতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় মুখ্যমন্ত্রী বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্রের যেমন অধিকার রয়েছে, রাজ্যগুলির অধিকারও স্পষ্ট বলা আছে সংবিধানে। ফলে, কেন্দ্র তার মত বা সিদ্ধান্ত একপেশে ভাবে চাপিয়ে দিতে পারে না রাজ্যের উপর। লক্ষ্যণীয় যে মুখ্যসচিবের চিঠিতেও বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন দফতরে ভারত সরকার সংক্রান্ত যে বিষয়গুলি মুখ্যসচিবের নজরে আনা দরকার, তা যেন মাসিক প্রশাসনিক রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত আনা হয়।’ আদালতের আদেশগুলিও যেন প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের নজরে আসে, রিপোর্ট তৈরির সময় সেদিকে মনোযোগ দিতে বলা হয়েছে।
উন্নততর কর্মসংস্কৃতির বিকাশেও নজর দিচ্ছে নবান্ন। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মাসে মাসে দফতরওয়াড়ি কর্মীদের হাজিরার নিয়মানুবর্তিতার খতিয়ান রিপোর্টে পেশ করতে হবে। পাশাপাশি, দফতরগুলিতে মানবসম্পদের শৃঙ্খলার ছবিটিও রিপোর্টে রাখতে হবে। প্রতিটি দফতরে কাজে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় স্তরে যে-সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা কতটা কার্যকর হল, তা রিপোর্টে জানাতে হবে।’