দিন কয়েক ধরেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় উত্তাল গোটা দেশ। বিশেষ করে প্রতিবাদের আগুনে পুড়ছে আসাম-সহ উত্তর-পূর্ব ভারত। যা দেখে মোদী সরকারের এই আইনকে মুসলিমদের ক্ষেত্রে ‘বৈষম্যমূলক’ বলে সরাসরি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত দফতরও। মোদী সরকারের এমনই কিছু পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ভাবমূর্তি বেশ খানিকটা ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতির জগতের লোকজন।
উল্লেখ্য, জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির ঘোষণার পর ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান, তুরস্কের মতো হাতে গোনা কয়েকটি দেশই শুধু বিরুদ্ধ মন্তব্য করেছিল প্রকাশ্যে। কিন্তু ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর থেকে কাশ্মীরের পরিস্থিতি, সাধারণ নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ওপরে প্রশাসনিক কড়াকড়ি, দীর্ঘদিন রাজনৈতিক নেতাদের বন্দী করে রাখা ও হালে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনকে কেন্দ্র করে দেশজোড়া বিক্ষোভে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের ছবিটা ম্লান হয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতি বিশেষজ্ঞেরা। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি এর পর ভারতে বিনিয়োগ করার আগে যে দু’বার ভাববে— এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।
প্রসঙ্গত, কূটনৈতিক ভাবে গত কয়েক দিনে পর পর ধাক্কা খেয়েছে সাউথ ব্লক। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার আসার পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তিস্তার মতো বিষয়ে মতপার্থক্যও চিড় ধরাতে পারেনি সুসম্পর্কে। কিন্তু নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের পরে বাংলাদেশের দু’জন শীর্ষ মন্ত্রী ভারত সফর বাতিল করেছেন। হাসিনা জমানায় যা কখনও হয়নি। প্রায় একই সঙ্গে ভারত সফর বাতিল করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। কারণ যে গুয়াহাটিতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে কেন্দ্রে রেখে দু’দেশের শীর্ষ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, বিতর্কিত আইনকে ঘিরে সেখানে এখন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ভারতের অ্যাক্ট-ইস্ট নীতির প্রশ্নে এই ঘটনা মোটেই কাঙ্ক্ষিত ছিল না।
তবে শুধু সফর বাতিল বা পিছিয়ে যাওয়াই নয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত সচিবালয় এক বিবৃতিতে কড়া সমালোচনা করেছে মোদী সরকারের চালু করা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের। বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তান— এই তিন দেশ থেকে শুধু অ-মুসলিম শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে। রাষ্ট্রপুঞ্জের বক্তব্য, এই আইন মৌলিক ভাবে বৈষম্যমূলক এবং বিশ্বের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতির সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এখানেই শেষ নয়। মার্কিন কংগ্রেসের দু’টি প্যানেল আলাদা ভাবে সমালোচনায় মুখর হয়েছে মোদীর ওই নয়া আইন নিয়ে। তাদের বক্তব্য, এই আইন গণতন্ত্রের মূল ভিতকেই দুর্বল করে দিল। কূটনীতিকদের মতে, একটি আইন কীভাবে গোটা বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তির চূড়ান্ত ক্ষতি করতে পারে, মোদী সরকারের সিএএ সেটাই করে দেখাচ্ছে।