যাদবপুরের বিজয়গড় জুড়ে ওপার বাংলা থেকে চলে আসা মানুষের বসবাস বছরের পর বছর ধরে। কারোর জন্ম এদেশে, এমনকি কারোর বাবার জন্ম এদেশেই কিন্তু শিকড় ওপার বাংলার। দাদু ঠাকুমারা এসেছেন, কিংবা কেউ ছয়ের দশক থেকেই এদেশে। তবুও মোদীর এনআরসি ক্যাব নিয়ে মাথায় চিন্তার ভাজ পড়েছে। সকলের এক প্রশ্ন, ছয়ের দশক থেকে ভোট দিচ্ছি এরপরও নাগরিক তা কিভাবে প্রমাণ করব!
যাদবপুরের অশ্বিনীনগর কলোনির প্রবীণ বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস। শীতদুপুরে নিজের দোতলা বাড়ির সামনে বসে তিনি জানালেন এখানেই তাঁর জন্ম। দেশভাগের পর ১৯৫০-৫৫ সাল নাগাদ চিত্তরঞ্জন বাবুর বাবা-মা ওপার বাংলা থেকে চলে এসেছিলেন এই কলোনিতে। যাদবপুরের এই কলোনিকে বছর পনেরো আগেও বরিশাল কলোনি নামেই লোকে চিনত। কারণ সেই সময় থেকেই যাদবপুরের বিস্তীর্ণ অংশে পূর্ববঙ্গের মানুষরা এসে জোটবদ্ধভাবে থাকতে শুরু করেন। এই কলোনিতে উঠে আসা সব পরিবারের শিকড়ই রয়ে গিয়েছে বরিশালে। কিন্তু তারা ভোট দেন। তার ছেলে সরকারি চাকরীও করেন।
চিত্তরঞ্জন বাবুর পাশে দাঁড়ানো এক যুবক বলেন, “এ আইন তো হয়েছে মুসলমানদের জন্য। হিন্দুদের যে কোনও সমস্যা হবে না, তা তো অমিত শাহ বলেই দিয়েছেন স্পষ্ট করে”। এভাবেই কথার পিঠে কথা জুড়ে বাড়ছে জল্পনা৷ এঁদের বেশিরভাগই এখনও এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে নির্দিষ্টভাবে তেমন কিছু জানেন না। বিভ্রান্তি আর দুশ্চিন্তার মধ্যেও তাঁরা বলছেন, এই আইন বা যা যা বলা হচ্ছে, তা কার্যকর করা শুরু হলে বোঝা যাবে, আমাদের কী সমস্যা হচ্ছে বা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা কেয়া রায় জানালেন, ‘এসব নিয়ে এত ‘ইন্টারেস্ট’ নেই। মুখ্যমন্ত্রী তো বলেছেন কিছু হবে না। আর আমরা তো সেই কবে এসেছি। আমার জন্ম এখানে। আমার বাবার জন্মও এখানে। আমরা আবার কী প্রমাণ করব’? একটি স্কুলের শিক্ষিকা কেয়াদেবী। তার বাবা দেবকুমার রায় ১৯৫০ সালে এপারে চলে আসেন বরিশালের ঝালোকাটি থেকে। তারপর বামফ্রন্ট সরকারের সময় জমির পাট্টাও পেয়েছেন। এই নাগরিকত্ব আইন দেশের ‘সংখ্যালঘু অনুপ্রবেশকারী’দের কথা ভেবে করা হয়েছে বলে ধারণা কেয়াদেবীর। এই পাড়ারই যুবক অতনু দাস পেশায় ব্যবসায়ী। বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এখানে আপনি সিএবি নিয়ে মানুষের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাবেন। নানা জল্পনা-কল্পনা, গুজব চলছে। কিন্তু প্রশাসন এই ব্যাপারগুলো কার্যকর করতে শুরু করলে মানুষ বুঝতে পারবে ব্যক্তিগতভাবে সুবিধা বা অসুবিধা কতটা। তাই আপাতভাবে দেখতে গেলে এই এলাকার বাসিন্দারা এখনও দুশ্চিন্তায় আছেন।