এ যেন চক্ষু-কর্ণের বিবাদভঞ্জন। অনেকেই শুনেছিলেন, দীঘা সেজেছে নতুন সাজে। বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে এসে সেই বদলে যাওয়া দিঘাকে চাক্ষুস করে অভিভূত বিদেশি শিল্পপতিরা। কেউ বললেন, ‘১০ বছর আগে এসেছিলাম। জঞ্জালময় সৈকত শহর ততটা মন কাড়তে পারেনি। এক দশকে যেভাবে ভোলবদল হয়েছে, দিঘার আকর্ষণ ছেড়ে যাওয়া এখন কষ্টকর।’ কেউ আবার বলছেন, ‘পার্কিং সমস্যার এত সুন্দর সমাধান না দেখলে বোঝা মুশকিল।’ বাণিজ্য নিয়ে আলোচনার আগে পরে দেশি-বিদেশি শিল্পপতিরা এখন দিঘার সামগ্রিক চেহারায় একেবারে মজে গিয়েছেন।
আর সেখানেই বারবার উঠে আসছে দিঘাকে নতুন রূপ দেওয়ার দায়ভার যিনি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদিচ্ছার কথা। শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া বলেন, ‘কয়েকবছর আগে সহকর্মীদের সঙ্গে আমিও এসেছিলাম দিঘায়। তখন দেখেছি, রাস্তাঘাট খুব খারাপ ছিল। গাড়িতে দিঘায় আসতে বিরক্ত লাগত। এখন সেখানে একেবারে ঝাঁ-চকচকে রাস্তায় কলকাতা থেকে তিন ঘণ্টায় দিঘা। গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা ছিল না। দিঘার এত দ্রুত এভাবে পরিবর্তন হয়েছে, তা ভাবাই যায় না।’ পাশাপাশি তিনি এদিনের অনুষ্ঠানের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে দিঘায় পাঁচতারা হোটেল তৈরির প্রস্তাব পেশ করেন। একইভাবে দিঘার প্রশংসা করেন ভুটানের প্রতিনিধি লোকনাথ শর্মা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দীঘা এখন মরশুমের ডেস্টিনেশন নয়, উইকএন্ড ডেস্টিনেশন। তাই পর্যটকদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কলকাতায় বড় কনভেনশন সেন্টার থাকলেও দিঘাতে নতুন তৈরি হয়েছে এই কনভেনশন সেন্টারটি। কোনও সংস্থা এসে মিটিং বা সেমিনার করতেই পারে। দীঘা কলকাতা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। এখানে স্থায়ী হেলিপ্যাডও রয়েছে। ট্রেনের যোগাযোগ করেছে। তাই এখানে আসতে কোনওরকম সমস্যা নেই। তাছাড়া সুন্দর সমুদ্রপাড় রয়েছে এখানে। সাত কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ তৈরি হচ্ছে। রাস্তা তৈরির কাজ ইতিমধ্যে প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। দু’টো ব্রিজ তৈরির কাজ চলেছে। পুরীর আদলে এখানেও মন্দির তৈরি হবে।’
বুধবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমুদ্রপাড়ে হাঁটেন। দীঘায় বসেই নিজের দপ্তরের কাজ করেন। পরিবহণ, সেচ ও জলসম্পদ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং কাঁথির সাংসদ তথা দিঘা-শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শিশির অধিকারীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনাও করেন। এদিনের অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, পরিবহণ, সেচ ও জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, নগোরন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী, তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী সকলেই।