বাংলাই একমাত্র জায়গা যেখানে বিনিয়োগকারীরা কোনও সমস্যার মুখোমুখি হন না। প্রতিদিন শিল্পপতিদের বাড়িতে কড়া নেড়ে হুমকি দেওয়া হয় না ব্যবসা বন্ধের জন্য। বৃহস্পতিবার দীঘায় বেঙ্গল বিজনেস কনক্লেভের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে এভাবেই নাম না করে কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলায় বিনিয়োগ করতে শিল্পপতিদের আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখানে বিনিয়োগের সমস্ত রকম সুবিধা আছে। মমতা বলেন, ‘ছোটখাটো অসুবিধে অনেক সময়ই হয়। তবে সে সব সমস্যা সরকার শান্তিপূর্ণভাবে দ্রুত মিটিয়ে ফেলে। এটাই সরকারের লক্ষ্য। একটা পরিবারের মধ্যেও ছোটখাটো সমস্যা দেখা যায়। কিন্তু সমস্যা তখনই বড় আকার নেয়, যদি প্রতিদিন শিল্পপতিদের বাড়ির দরজায় কড়া নেড়ে ব্যবসা বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়। তাঁদের চলে যেতে বলা হয়।’
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই মুম্বইতে এক শিল্প সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতেই বিশিষ্ট শিল্পপতি রাহুল বাজাজ প্রশ্ন তোলেন, কেন আপনার সরকারের বিরুদ্ধে সবাই মুখ খুলতে ভয় পান? কেন বাক স্বাধীনতা নেই? তার পরেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা রাহুল বাজাজের ছিদ্রান্বেষণে নেমে পড়েন। তিনি কংগ্রেসের কতটা ঘনিষ্ঠ, তা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। তার দু’একদিন পরই কলকাতায় এক তথ্য প্রযুক্তি সভায় মমতা বলেন, দেশে শিল্পে অনিশ্চয়তার আবহ। শিল্পপতিরা শিল্প গড়তে ভয় পান। মুখ খুলতে ভয় পান। অনেকে শিল্প গুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। পান থেকে চুন খসলেই হয় ইডি, নয় সিবিআই, নয় ইনকাম ট্যাক্স লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে শিল্পপতিদের পিছনে। এই তো, রাহুল বাজাজ মুখ খুলেছেন। হয়তো সরকার তাঁর পিছনে লেগে পড়বে। আমি সত্যি কথা বলতে ভয় পাই না। তাতে যা হয় হোক। তার রেশ কাটতে না কাটতেই এদিনের বিজনেস কনক্লেভে মমতার এই বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
দেশব্যাপী মন্দার মধ্যেও কীভাবে বাংলায় বেকারত্ব কমেছে তার উল্লেখ করে মমতা বলেন, বিশ্বব্যাপী মন্দার ছাপ থেকে এ দেশও রেহাই পায়নি। তবে বাংলায় এর ছাপ না পড়ার কারণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে তাঁর সরকার অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। মমতার দাবি, গত ৮ বছরে বাংলার ৪০ শতাংশ বেকারি কমার এটাই সবচেয়ে বড় কারণ। তিনি বলেন, ‘বড় শিল্পের পাশাপাশি কুটির ও অনুসারী শিল্পের গুরুত্ব এতটুকুও কম নয়। তাই কুটীর শিল্পে বাংলা দেশের মধ্যে শীর্ষে।’ এদিন বাংলার তাঁতিদের উদ্দেশ্যেও সুখবর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার থেকে বাংলার যে কোনও দুর্যোগের পর ত্রাণের জন্য যাতে দ্রুত জামা-কাপড়ের ব্যবস্থা করা যায় তার জন্য তন্তুজের মতো সরকারি সংস্থাকে আগাম বরাত দেওয়া হচ্ছে।