সংগঠনের যে রাজনৈতিক পথ ছিল, তা ক্রমশই ‘বিদ্বেষের রাজনীতিতে’ পরিণত হয়েছিল। আর নিজেদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হতেই মাথা চাড়া দিয়েছিল দলীয় কোন্দল। যার ফলে এবার দু’ভাগ হয়ে গেল বাঙালির কথা, বাংলার কথা, বাংলার মুখ হয়ে উঠতে চাওয়া ‘বাংলা পক্ষ’। অক্টোবরের শেষ দিকে সংগঠনের ভাঙ্গন সম্পন্ন হলেও অবশেষে সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে নতুন নাম দিয়ে পথ চলা শুরু করল বাংলা পক্ষ থেকে বেরিয়ে আসা একদল তরুণ-তরুণী। আত্মপ্রকাশ করল ‘জাতীয় বাংলা সম্মেলন’ নামে এক নয়া সংগঠন। গতকাল সংবাদমাধ্যমের সামনে বাঙালির পক্ষে, বাংলার পক্ষে ৪০টি দাবি নিয়ে চলার অঙ্গীকার করলেন কার্যকরী সভাপতি অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কার্যকরী সহ-সভাপতি তন্নী দাস, কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধব্রত দাস এবং সংগঠনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বৃন্দ।
উল্লেখ্য, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এর আবেগকে ভিত্তি করেই ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে আত্মপ্রকাশ করেছিল বাংলা পক্ষ। কিন্তু, বছর ঘোরার আগে কেন নতুন সংগঠন তৈরি করতে হল? নয়া সংগঠনের নেতাদের অভিযোগ, শুরুতে সংগঠনের যে রাজনৈতিক পথ ছিল তা ক্রমশ ‘বিদ্বেষের রাজনীতিতে’ পরিণত হয়েছে। বাংলা পক্ষ ‘হিন্দুত্ববাদী বাঙালির’ স্বপক্ষে প্রচার চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁদের। সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি অনির্বাণও পুরনো সংগঠনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, ‘বাংলা পক্ষ তৈরি হয়েছিল ভূমি সন্তানদের জাতীয়তার কথা বলার জন্য। কিন্তু সময়ের স্রোতে বাংলা পক্ষের কিছু নেতৃবৃন্দ তাঁদের ঘোষিত কর্মসূচী থেকে সরে এসে বাঙালির অধিকার অর্জনের সংগ্রামের তুলনায় জাতিবিদ্বেষী এবং জাতিবাদী কর্মকাণ্ডে বেশি মনোনিবেশ করেছেন। তাঁরা হিন্দুত্ববাদী বাঙালির স্বপক্ষে প্রচার করাকে অধিক গুরুত্ব দিতে শুরু করেন। স্বভাবতই সংগঠন ভাঙ্গনের মুখে পড়ে যায়।
‘বিদ্বেষধর্মী রাজনীতি’ বলতে ঠিক কী বলতে চাইছেন নয়া সংগঠনের নেতারা? আইএসআই-এর গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের বাংলা পক্ষের বিরুদ্ধে বাঙালি প্রেমের নামে একাধিক বার অবাঙালিদের হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। আর এসব নিয়ে ‘অসহিষ্ণুতা’র অভিযোগের তালিকা ক্রমশ লম্বা হয়েছে বাংলা পক্ষের বিরুদ্ধে। অনির্বাণের স্পষ্ট অভিযোগ, ‘বাংলা পক্ষের গোড়ার কথা ভুলে একটি বিদ্বেষধর্মী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এটা বাংলা পক্ষের উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।’ জাতীয় বাংলা সম্মেলনের নেতাদের দাবি, ভাঙনের প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। শেষ পর্যন্ত ২৭ অক্টোবর বাংলা পক্ষ সংগঠনটিতে আড়াআড়ি ফাটল ধরে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং জেলা স্তরের একাংশ সদস্য মিলে নতুন রাজনৈতিক সংগঠন তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করল জাতীয় বাংলা সম্মেলন।
নতুন সংগঠনের লক্ষ্য কী? অনির্বাণের দাবি, ‘বিদ্বেষ নয়, মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনই আমাদের মূল লক্ষ্য হতে চলেছে। বাঙালি আবেগকে সামনে রেখে বাংলা পক্ষ নিজের যে পরিচয় তৈরি করেছে তা ছেড়ে বেরিয়ে বাংলার বাইরের মানুষের অধিকার আন্দোলনেও নামবে এই নতুন সংগঠনটি।’ আর সংবাদমাধ্যমের সামনে সংগঠনের কার্যকরী সহ-সভাপতি তন্নী দাস জানান, প্যানেল ডিসকাশনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের ওপরে তারা আলোকপাত করবেন, এনআরসি এবং ক্যাবের বিরুদ্ধে জেলাভিত্তিক প্রচার অভিযান করবেন। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক-এটিএম পরিষেবায় বাংলার দাবি নিয়ে ডেপুটেশন জমা দেওয়ার কর্মসূচীও চলবে। এর পাশাপাশি, সংগঠনের তরফে তোলা হবে, ভারতীয় সেনা বাহিনীতে বাংলা রেজিমেন্ট গঠন থেকে শুরু করে বাংলার পুলিশ নিয়োগ চাকরিতে নারীদের জন্য ৪০ শতাংশ ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ২ শতাংশ সংরক্ষণ চাওয়ার মত একগুচ্ছ দাবি।