রাজ্যে ৩ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কার্যত ‘হোয়াইট ওয়াশ’ হয়ে গিয়েছে বিজেপি। জেতা আসন করিমপুরের পাশাপাশি দলের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে অধরা কালিয়াগঞ্জ-খড়গপুরেও এবার ফুটেছে ঘাসফুল। যার মধ্যে খড়গপুর সদর ছিল বিজেপির জেতা আসন। লোকসভাতেও এখানে লিড পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। উপনির্বাচন পর্বে এহেন বিপর্যয়ের পর বিজেপির অভ্যন্তরের দ্বন্দ্ব এবার একেবারে প্রকাশ্যে এসে পড়ল।
জেলায় জেলায় এখন বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যেমন ক্ষোভ দানা বাঁধছে, তেমনি গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো বিভিন্ন জায়গায় দলের সদ্যসমাপ্ত মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন নিয়েও যথেচ্ছ দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠছে। শুধু তাই নয়। দলীয় নেতানেত্রীদের বাড়ি ভাঙচুর হওয়া ছাড়াও পার্টি অফিসে তালা, পোস্টার পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়।
শুক্রবার যেমন বিজেপির উত্তরপাড়ার এক জেলা নেতার অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিলেন কর্মীরা। শুধু তাই নয়, ওই নেতা সহ নতুন মণ্ডল সভাপতির নামে এলাকাতে দেদার পোস্টারও মেরেছে বিজেপি কর্মীরা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিজেপির জেলা নেতা প্রণব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগও সেখানে করা হয়েছে। উপনির্বাচনে হারের অব্যবহিত পরে এভাবেই গেরুয়া শিবিরের বিভাজন ও হতাশা প্রকাশ্যে চলে এসেছে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতেই উত্তরপাড়ার ওই দলীয় অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিজেপি কর্মীরা। তবে বিজেপির জেলা নেতা প্রণববাবু বলেন, ৩২ বছর ধরে দল করছি। দলের কেউ আমার বিরুদ্ধে এমন করতে পারে না। এটা তৃণমূলী খেলা। যদিও বিজেপির একাংশের কর্মীরাই জোর গলায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে খড়দা ব্লকের বোদাই ঘোষপাড়ায় বিজেপির নব্য ও পুরনোর দ্বন্দ্বে একটি দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটল। দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার পরেই উত্তেজনা ছড়ায় ঘোষপাড়ায়। ওই রাতে বিজেপির দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একে অপরকে আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের সাতজন জখম হয়েছেন।
দলের মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন নিয়ে বহু জায়গাতেই বিজেপির অন্দরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিলই। পশ্চিম বর্ধমানে অনেকের নাম ঘোষণা করে স্থগিত করে দিয়েছিল দল। এবার মণ্ডল সভাপতি নির্বাচনে স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে শুক্রবার সিউড়ির বিজেপি জেলা কার্যালয়ে তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন দলীয় কর্মীরা।
এছাড়া পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছে বিজেপি কর্মীরা। মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন নিয়ে সেখানেও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বাঁকুড়াতেও মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কর্মীরা।