প্রথম মোদী সরকারের আমল থেকে বারবারই বঞ্চনার শিকার হয়েছে বাংলা। দ্বিতীয় ইনিংসেও বজায় রয়েছে সেই ধারা। রাজ্যের শিক্ষা দফতরের অভিযোগ, শিক্ষার অধিকার আইন মেনে এ রাজ্যে নিযুক্ত প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন খাতে বকেয়া টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। গত অর্থবর্ষের হিসেবে প্রকাশ, প্রতিশ্রুত বরাদ্দের বিপুল অংশই কেন্দ্রের তরফে এখনও বকেয়া রয়ে গিয়েছে।
বিকাশ ভবনের কর্তাদের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে প্যাবের বৈঠক মোতাবেক, ৩,৮৪৬ কোটি টাকার অনুমোদন মিলেছিল। কেন্দ্রের দেওয়ার কথা ২,৩০৭ কোটি টাকা। যদিও বাংলাকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১,০৩০ কোটি টাকা। ফলে শুধু স্কুলশিক্ষকদের বেতনই নয়। স্কুলশিক্ষার নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আর্থিক সঙ্কট প্রবল হয়ে উঠছে। সীমিত আর্থিক ক্ষমতায় রাজ্যের বরাদ্দ চলনসই হলেও কেন্দ্রের বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে কমছে। যা ২০০৯ সালে সংসদে পাশ হওয়া শিক্ষার অধিকার আইন (আরটিই) বাস্তবায়ন নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
সমগ্র শিক্ষা অভিযানে ৬০ ও ৪০ অনুপাতে অর্থ বরাদ্দের কথা কেন্দ্র ও রাজ্যের। স্কুলশিক্ষা সংক্রান্ত যে যে বিষয়ে প্যাব মেনে অর্থ বরাদ্দের কথা, তা হল- সিভিল (অর্থাৎ, নতুন শ্রেণিকক্ষ, স্কুল রক্ষণাবেক্ষণ, পানীয় জল, শৌচাগার), কমিউনিটি মোবিলাইজেশন, চিলড্রেনস উইথ স্পেশাল নিড, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, লার্নিং এনহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম, পাঠ্যবই, শিক্ষকদের বেতন, টিচার্স লার্নিং মেটিরিয়ালস, বিজ্ঞান আবিষ্কার যোজনা, ইনোভেটিভ স্কিম, প্রশাসনিক কর্মী, পার্শ্বশিক্ষক, শিক্ষাবন্ধু, শিক্ষামূলক স্বেচ্ছাসেবীদের ভাতা, ইনটিগ্রেশন অফ টেকনোলজি ইন এডুকেশন, নির্মল বিদ্যালয় অভিযান ইত্যাদি।
কিন্তু মোদী সরকারের গত সাড়ে পাঁচ বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রকৃত বরাদ্দ কমছে বলেই অভিযোগ তুলছে শিক্ষামহল। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে যেমন বরাদ্দ কমছে, তেমনি গবেষকদের স্টাইপেন্ড ছাঁটাই হয়েছে। এমনকী বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বহু প্রকল্পে অর্থের জোগানও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্যাবের তথ্যও দেখাচ্ছে, স্কুলশিক্ষাও সংকটের আবর্তে পড়েছে। এমনকী, শেষ চার আর্থিক বছরে রাজ্যকে প্যাবের বৈঠকে আলোচনা সাপেক্ষে কেন্দ্রের দেওয়ার কথা ছিল ১০,৪৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু রাজ্য পেয়েছে মোটে ৩,৫৯৩ কোটি টাকা।
এই পরিস্থিতিতে বিকাশ ভবনের এক কর্তার কথায়, ‘বেশ কয়েক বার এই দাবি জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে টাকা দিতে অনুরোধ করেছেন। তার পরেও দিল্লী নীরব।’ তবে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমাদের বিচারে আমাদের দাবি নায্য। তাই এই বঞ্চনা নিয়ে আমরা সরব হবই।’