আশা ছিল অনেক। কিন্তু তা পূরণ করতে ব্যর্থ চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের হিসেব। সারা দেশ তাকিয়ে ছিল এই হিসেবের দিকে। দেশের অর্থনীতির বাজার তলানিতে ঠেকেছে। তা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে ব্যর্থ মোদী সরকার। আজকেও কোনো আশার বাণী শোনাতে পারলেন না কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তাঁর খতিয়ানে দেখা গিয়েছে জুলাই থেকে অগস্ট মাস পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ মোট উৎপাদন তথা জিডিপি বেড়েছে মাত্র সাড়ে চার শতাংশ হারে।
তারপরই দিল্লীতে একটি সম্মেলনে ঘরোয়া অর্থনীতি নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি বলেন, “মন্দা যে ক্রমশ তীব্র হচ্ছে তা আর অস্বীকার করার উপায় নেই। তা দেশে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে কৃষক, যুব সম্প্রদায় ও গরিবরা এর ফলে সবথেকে বিপদে পড়তে পারেন।”
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “এই পরিস্থিতিতে শুধু সরকারের আর্থিক নীতি পরিবর্তন করলেই যথেষ্ট ফল পাওয়া যাবে না। আমি বিশ্বাস করি কেবল সেই পদক্ষেপেই ঘরোয়া অর্থনীতি চাঙ্গা হবে না। সামগ্রিক পরিবেশ শুধরোতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “সমাজে একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তা বদলে আত্মবিশ্বাসের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। সেটাই বৃদ্ধির পথকে সুগম করবে। একমাত্র তখনই ঘুরে দাঁড়াতে পারে অর্থনীতি।”
একথা বোঝাতে গিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছাত্র জীবনের স্মৃতিচারণও করেন। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের শেখায় কী ভাবে নিজের মত ও বক্তব্যকে সাহসের সঙ্গে তুলে ধরা যায়। সেখানে খোলামেলা আলোচনা হয়, মতের মিল হয়, মতান্তরও হয়। সবটাই হয় মুক্ত পরিবেশে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় কোনও ইকো চেম্বার নয় যেখানে একই মত প্রতিধ্বনিত হয়। বরং তা বিভিন্ন মতের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ তৈরি করে দেয়।”
এখানেই না থেমে মনমোহন বলেন, “আমি মহান সব অর্থনৈতিক শিক্ষকের সান্নিধ্যে থেকে পঠনপাঠন করেছি। যেমন জোয়ান রবিনসন, নিকোলাস কালডোর, রিচার্ড কান প্রমুখ। তাঁরা বুঝিয়েছিলেন, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের পরিবেশ গড়ে দেয় আসলে সমাজ। অর্থাৎ সমাজই বৃদ্ধি ও বিকাশের কারিগর। দেশের অর্থনীতি থেকে কেউ সমাজকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারে না। বরং সমাজ সুস্থ থাকলে তবেই বিকাশ ও বৃদ্ধি মসৃণ হতে পারে।” প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি কথা যে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার ও গেরুয়া শিবিরের উদ্দেশে বলেছেন তা নিয়ে সংশয় নেই। প্রশ্ন হল, একথা বর্তমান সরকার স্বীকার করবেন কিনা!