এনআরসির জেরে এক ধাক্কায় ১৯ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। ৩১ আগস্ট প্রকাশিত আসামের নাগরিকপঞ্জি তালিকায় বাদ পড়েছিলেন বহু হিন্দুরা। তাই গত সপ্তাহেই কেন্দ্র সরকার জানান তাঁরা ফের নতুন এনআরসি করার কথা বিবেচনা করছে। তাই আতঙ্ক কমার কোনও ইঙ্গিত নেই আসামে। বীতশ্রদ্ধ মানুষ বলছেন, “ আর কতবার নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে আমাদের?”
এনআরসি প্রাণ কেড়েছে বহু মানুষের। মধ্য আসামের আঁচলপাড়া গ্রামের থেকে ৪৫০ কিমি দূরের কেন্দ্রে নিজের নাম সংযোজন করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন কৃষক হানিফ আলি। চোদ্দ জনের পরিবারের মাথায় তখন আকাশ ভেঙে পড়েছে। এনআরসির তালিকায় তাঁদের নাম ছিলই ঠিকই কিন্তু প্রাণের বদলে ‘নাম’ চেয়েছিলেন কি তাঁরা? হানিফ আলির বছর পঁচিশের ভাইপো মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমি আমার কাকার সঙ্গে ওই গাড়িতেই ছিলাম। আমাদের মতো মানুষেরা চাইছে সর্বস্ব দিয়ে এনআরসির তালিকায় নিজের নাম তুলতে। আর কতবার নিজেদের ভারতের নাগরিক প্রমাণ করতে হবে আমাদের? এই হেনস্তা না করে তো মেরে ফেলা ভালো।”
আঁচলপাড়া গ্রামের বিজ্ঞানের শিক্ষক বছর সাঁইত্রিশের সামসুল হক নিজে একজন এনআরসির আধিকারিক, কিন্তু নিজের বোন আবিদা সিদ্দিকের নাম তালিকায় যোগ করতে হিমসিম খাচ্ছেন আধিকারিক নিজেই। ভবিষ্যতে আবারও এনআরসি হলে, বহু মানুষেরই ‘হার্ট অ্যাটাক’ হতে পারে, এমন কথাও বলেছেন সামসুল। তিনি বলেন, “আমরা প্রকৃত ভারতীয়। কিন্তু বার বার আমাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে বলা হচ্ছে। দরিদ্র মানুষদের জন্য অর্থনৈতিক বোঝা তো আছেই। তার সঙ্গে এই এনআরসি সম্মানের বোঝাও চাপিয়ে দিচ্ছে।”