তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অধরা ছিল কালিয়াগঞ্জ ও খড়গপুর। প্রথম থেকেই প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির গড় কালিয়াগঞ্জে ছিল কংগ্রেসের দাপট। আর দিলীপের গড় থেকে ষোলোর ভোটে এবং উনিশের লোকসভা ভোটে জিতেছিল বিজেপি। তবে লোকসভায় সেখানে ৪৫ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতেছিল গেরুয়া শিবির, মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই মমতার উন্নয়নে ভর করে সেই বিশাল ব্যবধান মুছে ফেলেছে তৃণমূল। আর করিমপুরেও জয়ী হয়েছে রাজ্যের শাসক দল। অর্থাৎ উপনির্বাচনে বাংলার তিন আসনেই ডাহা ফেল বিজেপি। যার ফলে লোকসভা ভোটে বাংলায় ১৮ টি আসনে উজ্জ্বল হয়েছিল যে দিলীপ ঘোষের মুখ, তা-ই এবার অস্বস্তির কালো মেঘে ঢেকে গেল! স্বাভাবিক ভাবেই গেরুয়া শিবিরের মধ্যেই প্রশ্ন উঠে গেল, বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদ থেকে কি এবার ইস্তফা দেবেন দিলীপ?
প্রসঙ্গত, খড়গপুর সদর বিধানসভা কেন্দ্রে এদিন যখন গণনা চলছে তখনও সেখানে ছিলেন না সেখানকার প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপবাবু। তিনি তখন সংসদে। ফলে তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি। কিন্তু দিলীপবাবুর পরে যাই প্রতিক্রিয়া দিন, তাঁর দলের মধ্যে অধিকাংশ নেতা-কর্মীই ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করছেন এই ব্যর্থতা তাঁরই। উল্লেখ্য, চোদ্দর ভোটে বাংলায় দুটো আসনে জিতেছিল বিজেপি। উনিশে পৌঁছে তা এক লাফে ১৮-তে পৌঁছে যাওয়ায় দিলীপের দেমাক যে বেড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। তবে আজ উপনির্বাচনের ফলে পরিষ্কার, লোকসভা ভোটে বিজেপি বাংলায় যে সাফল্য পেয়েছিল তা অনেকাংশে জাতীয় নেতৃত্ব তথা মোদী-শাহদের কারণে। এছাড়া সেই জয়ের পেছনে মুকুল রায়, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়দের মতো আরও অনেক নেতারই কৃতিত্ব ছিল। বিশেষ করে লোকসভা ভোটের সময় মুকুলের পরামর্শই অনেকাংশে মেনে চলেছিলেন শাহরা।
কিন্তু লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, সেই মুকুল রায় সম্পর্কেই প্রকাশ্যে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন দিলীপ। এমনকী তিনি এ-ও বলেছেন যে, ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহেরও মুকুলের থেকে বেশি মহিমা ও দক্ষতা রয়েছে। দিলীপের উৎসাহে তাঁর অনুগামীরাও মুকুলকে দলের মধ্যে হেয় করতে শুরু করে দেন। তাঁরা এ-ও বলতে শুরু করে দেন যে একুশের ভোটে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন দিলীপই। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ব্যক্তি মুকুল রায় এখানে বড় কথা নয়। বড় কথা হল, রাজনীতিতে দিলীপ মুকুল রায়দের তুলনায় অনেক নবীন। কিন্তু তাঁর ইগোই দলকে ডুবিয়ে দিল। তিন আসনে হেরে মুখ পুড়ল বিজেপির। বস্তুত খড়গপুর সদরে বিজেপির হারকে দিলীপের ব্যক্তিগত হারই বলা যায়। কারণ, ষোলোর ভোটে এই কেন্দ্র থেকেই জিতে বিধানসভা গিয়েছিলেন তিনি।
শুধু তাই নয়। লোকসভা ভোটেও খড়গপুরে এগিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু এবার উপনির্বাচনে প্রচারের সময়েই বিজেপি নেতারা টের পেয়ে যান খড়গপুরের গতিক ভাল নয়। কারণ এক রবিবার গোল বাজারে প্রচারে গিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল দিলীপকে। কার্যত সেখান থেকে তাঁকে চলে আসতে হয়। সেদিন বিকেলেই বিজেপির এক নেতা খড়গপুরে প্রচারে গিয়েছিলেন। তিনি রাতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে রিপোর্ট দেন যে খড়পুরের অবস্থা কিন্তু ভাল নয়, এখনই ব্যবস্থা না নিতে পারলে কপালে দুঃখ রয়েছে। আখেরে সেটাই হল। এমনিতেই বিজেপিতে সাংগঠনিক রদবদল আসন্ন। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে তা হওয়ার কথা। তার আগেই তৃণমূলের কাছে তিন-শূন্যয় হারায় দিলীপ ঘোষের ওপর পদ ছাড়ার জন্য চাপ বাড়ল বইকি। এখন দেখার আগেভাগে দিলীপ নিজেই ইস্তফা দেন, নাকি তাঁকে সরিয়ে দেন দিল্লীর নেতারা।