গতকাল সন্ধ্যের মোহনবাগান লন। চারিদিকে প্রয়াত সচিব অঞ্জন মিত্রর অমলিন হাসির ছবি। দু’টো স্টেজ। একটায় প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী শ্রাবণী সেন বসে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছেন। আর একটা মঞ্চে উঠে বক্তারা করছেন স্মৃতিচারণ। শ্রোতারা যাতে বিরক্ত না হন তার জন্য স্মৃতিচারণের সঙ্গে ছিল গানের ব্যবস্থা। সব কিছু ছিল পূর্বপরিকল্পিত। পরিকল্পনা করেই যে কোনও অনুষ্ঠান হয়। এর মধ্যে নতুনত্ব নেই। কিন্তু সেই পরিকল্পনা যদি প্রয়াত ব্যক্তির দ্বারা হয় তখন অবাক লাগে বৈকি। বুধবার স্মরণসভা হল প্রয়াত সচিবের পরিকল্পনা ও ইচ্ছামতোই। তিনি প্রয়াত হওয়ার আগে যেভাবে চেয়েছিলেন সেভাবেই অঞ্জন মিত্রকে স্মরণ করল মোহনবাগান।
অনুষ্ঠান চলাকালীন ক্লাবের অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত বলছিলেন, “গত আগস্টে আমাকে একদিন ডেকে পাঠিয়ে কীভাবে তাঁর মরদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে, কীভাবে ক্লাবে স্মরণসভা হবে, সব বলে গিয়েছিলেন অঞ্জনদা। তাঁর নির্দেশমতোই আমরা আজ এই স্মরণ সভা করলাম।” সকলেই তখন হতবাক। আরও অদ্ভুত, সেই সভায় কংগ্রেসের সোমেন মিত্র থেকে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অরূপ রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় যেমন ছিলেন, পাশাপাশি দেখা গেল প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র, ফৈয়াজ আহমেদ খানের মতো রাজনৈতিক নেতাদেরও। এছাড়া ছিলেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি সুব্রত দত্ত, আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায়।
উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলাররাও। সুব্রত ভট্টাচার্য, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, শ্যাম থাপা, জহর দাস, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, মানস ভট্টাচার্য, মিহির বসু, কৃষ্ণেন্দু রায়, কল্যাণ চৌবে, শঙ্করলাল চক্রবর্তী, অলোক মুখোপাধ্যায়-সহ অনেকেই। তাঁদের বক্তব্যে প্রকাশ পাচ্ছিল প্রয়াত সচিবের নানা দিক। তাছাড়া অঞ্জনের মেয়ে সোহিনীর সঙ্গে ক্লাব সচিব টুটু বোসের উপস্থিতি সভার তাৎপর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল।
সোমেন মিত্র জানালেন, পরকে আপন করে নেওয়ার অদ্ভুত আকর্ষণ দেখেছিলেন প্রয়াত সচিবের মধ্যে। মন্ত্রী শোভনদেব বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন কীভাবে মোহনবাগান বা মাঠ পাগল ছিলেন অঞ্জন। প্রাক্তন সচিবকে কিংবদন্তি কর্তার সমতুল্য বললেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। প্রাক্তন ফুটবলার প্রশান্ত যেমন তুলে ধরলেন অঞ্জনের প্রতিবাদী চরিত্রের দিক। মনোরঞ্জন জানালেন, ফুটবলারদের চারিত্রিক গঠন তাঁর কাছে শেখা। জহর দাস বললেন, তাঁর হাত ধরে ক্লাব কীভাবে পরিবর্তন হয়েছিল। সকলের বক্তব্যে বারবার প্রকাশ পেয়েছে টুটু-অঞ্জন জুটির কথা। এই দু’জনের হাত ধরেই কীভাবে বিকশিত হয়েছে মোহনবাগান। সুব্রত ভট্টাচার্য তো বলেই দিলেন, “এই দু’জন হলেন ক্লাবের সম্পদ।”
সবচেয়ে আবেগঘন বক্তব্য পেশ করেন টুটু বোস। এবার থেকে মোহনবাগান দিবসে অঞ্জন মিত্রের নামাঙ্কিত দেশের সেরা ক্রীড়া প্রশাসককে পুরস্কৃত করা হবে। বুধবার প্রয়াত প্রাক্তন সচিবের স্মরণ সভায় এমনটাই ঘোষণা করলেন বর্তমান ক্লাব সচিব। অন্যদিকে, এদিনের সভায় গত নির্বাচনে বিরোধী শিবিরে দাঁড়ানো প্রয়াত সচিবের মেয়ে সোহিনী মিত্রকে মোহনবাগানের কার্যকরী কমিটিতেও নেওয়া হল।