রাজ্যের তরফে সংবিধান দিবস পালন উপলক্ষ্যে রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমন্ত্রণ রক্ষা করতে মঙ্গলবার তিনি বিধানসভায় এসেছিলেন বটে, তবে গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হলেও তাঁর সঙ্গে সামান্য সৌজন্য বিনিময়ের ধারকাছ দিয়ে গেলেন না জগদীপ ধনকড়। আর তার ফলে এবার আরও তীব্র হল রাজ্য-রাজ্যপাল সঙ্ঘাত। মঙ্গলবার সংবিধান দিবসকে হাতিয়ার করে রাজ্যপালের ভূমিকাকে রীতিমতো কাঠগড়ায় তুললেন মুখ্যমন্ত্রী।
ভাষণ দিতে গিয়ে অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাজ্যপাল ভাল বলেছেন। ওঁকে ধন্যবাদ। তবে, এটা বাংলা, কাশ্মীর নয়, সে কথা ভুলে গিয়েছিলেন। কাশ্মীরটাই বেশি করে বললেন। আমরা জানি অধিকার কার কতটা।’ মমতার কটাক্ষ, ‘আমরা তো জানি, কে আপনাকে পাঠিয়েছে। সকাল থেকে উঠে কী কাজ আপনার। কাট আউটের কথা বলেছিলেন। তাহলে সংবিধান প্রণেতাদের একটা অধ্যায় তৈরি করতে হবে। কাটআউট রাজভবন নাকি রাজনৈতিক দলগুলি লাগাবে তা ঠিক করে দেবে।’
উল্লেখ্য, গতকাল রাজ্য বিধানসভায় সংবিধান দিবসের উদযাপন অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল আসার আগে বক্তব্য পেশ করেন প্রাক্তন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ মীরা কুমার, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য, প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি প্রমুখ। ছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সকল মন্ত্রী, শাসক দলের বিধায়করা। এছাড়াও ছিলেন কংগ্রেসের আবদুল মান্নান, সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীরা।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ভাষণ দিতে আসেন অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে। এবং তাঁর ভাষণে যথারীতি বেসুরো মন্তব্য এসে পড়ে। ধনকড় তাঁর বক্তৃতার শেষ বেলায় বলেন, ‘রাজ্যপাল সাংবিধানিক প্রধান হলেও আমার পদের মর্যাদাহানি হচ্ছে। আমার অধিকার খর্ব হচ্ছে। আপনারা বিবেকের ডাক শুনুন।’ এরপরেই রাজ্যপাল চলে যান সভাকক্ষ ছেড়ে। তবে তাঁর বেরোনোর মুখে অধিবেশন কক্ষে আওয়াজ ওঠে, ‘জয় বাংলা। জয় হিন্দ।’ শুনেই মুচকি হেসে কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন। পিছন ফিরে নমস্কার করে আবার হাঁটা শুরু করেন তিনি।
এরপরেই বক্তৃতা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। সংবিধান সম্পর্কে কিছু কথা বলেই সমালোচনার ঝড় তোলেন দিল্লীর রাজনীতির বিরুদ্ধে। এসে পড়ে রাজ্যপালের কথার জবাবও। মমতা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী, অধ্যক্ষ, রাজ্যপাল থেকে প্রধানমন্ত্রী— সব পদই আলাদা। রাষ্ট্রপতিও নির্বাচিত পদ। কিন্তু রাজ্যপাল নন। আমরা তাঁর যা যা অধিকার আছে, নিশ্চয়ই মানব। কেন মান্যতা দেব না? কিন্তু আজকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? কেন এমন হবে? এটা গণতন্ত্রের পক্ষে ভাল নয়।’
রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কে কাকে আমন্ত্রণ জানাবে, তা ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই বলে ভোর ৫টা থেকে টুইট করবেন? তাহলে তো রাত থেকে বসে থাকতে হবে। ক’বার চিঠি দেবেন আপনি। রোজ একই কথা তোতাপাখির মতো বলবেন, আপনি কি সত্যিই চান আমাকে রাজভবনে নিমন্ত্রিত হিসেবে? নাকি জনসমক্ষে প্রচারই আপনার উদ্দেশ্য।’
রাজ্যপাল এর আগে হেলিকপ্টার পাননি বলেও অভিযোগ করেছিলেন। তাঁর কেন কাটআউট নেই— এ নিয়েও মন্তব্য করতে ছাড়েননি। এরও জবাব দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে বলা হল হেলিকপ্টার লাগবে। সেদিন কেন্দ্রীয় দল এসেছিল বুলবুল বিপর্যয়ের পর। আমাদের তো নিজস্ব কোনও প্লেন বা হেলিকপ্টার নেই। অনেক রাজ্যে তো নিজেদের বিমানে চলাফেরা করে। কই, আগে এতজন রাজ্যপাল এসেছেন, কারও সঙ্গে তো এই সমস্যা হয়নি?’
মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, ‘কোনও তিক্ততা নয়। কটূক্তিও নয়। তুমি অমানবিক হলে আমি মানবিক হব না কেন? আমাদের সংবিধান সেটাই শিখিয়েছে।’