গত সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে সেই সময় প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আছড়ে পড়ে দক্ষিণবঙ্গে। তাই বাধ্য হয়ে উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করেছিলেন তিনি। তবে বুলবুলের প্রকোপ কাটতেই সোমবার কোচবিহার দিয়ে তাঁর সফর শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর গতকাল গঙ্গারামপুর ও মালদায় দুটি প্রশাসনিক বৈঠক সেরে বুধবার সাগরদীঘি আসেন তিনি। আর আজ সাগরদীঘিতেই একটি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, কান্দি মাস্টার প্ল্যান প্রায় শেষের পথে। ৪৩৪ কোটি টাকার কান্দি মাস্টার প্ল্যান সম্পূর্ণ হলে এই প্রকল্প থেকে যে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন, সে কথাও জানিয়েছেন তিনি।
এদিন বাহালনগরের পাশেই ধুমারপাহাড় গ্রামের মাঠে এই সভার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, ‘এই অঞ্চলে বাঁধ সংরক্ষণের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। আট বছরে এক লক্ষ একরের বেশি জমি সেচের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ২০১১ সালে বাংলায় সেচের জমির সংখ্যা ছিল ২২,৬৫০ একর। আর এখন হয়েছে এক লক্ষ ২৩ হাজার ৮৪০ একর। এই জেলায় ২২ হাজার ছেলেমেয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠিতে ১২৭ টাকার সরকারি অনুদান পেয়েছেন। এই জেলায় যুবশ্রী আছে ২৪ হাজারেরও বেশি। তৈরি হয়েছে একাধিক পর্যটন কেন্দ্র আর ছোট-মাঝারি শিল্প।’
এর পাশাপাশি, এখানে যে এক হাজার কোটি টাকার রাস্তার প্রকল্পের কাজ চলছে, সভা থেকে সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এক লক্ষ ২৫ হাজারের বেশি পরিবার আবাস যোজনার আওতায় বাসস্থান পেয়েছে। গ্রামীণ সড়ক প্রকল্পের কাজও সমাপ্ত হয়েছে। এছাড়াও বাংলায় শুধু পঞ্চায়েত থেকে এক কোটি ৮৩ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি করতে পেরেছি।’ রাজ্যের কৃষকদের চাষের জমির বিমা করিয়ে নেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি। তাঁদের বিনা পয়সায় শষ্য বিমা করিয়ে নেওয়ার কথাও বলেন। এই বিমার খরচ যে রাজ্য সরকারই বহন করবে, এবং তার জন্য যে সরকারের মোট খরচ হচ্ছে ৭০০ কোটি, সে কথাও জানাতে ভোলেননি মমতা।
তিনি বলেন, ‘কোনও কৃষক যদি ৬০ বছরের আগেই যগি রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান, সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ওই কৃষকের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা দেয়। আর এখন কৃষি জমি মিউটেশনের জন্যেও কোনও টাকা লাগে না। কৃষকদের ভাতার পরিমাণ ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে রাজ্যের তৃণমূল সরকার ১০০০ টাকা করেছে। এই সরকার কন্যাশ্রীর জন্যে দেয় প্রায আট হাজার কোটি টাকা। এই জেলায় সাতটি নতুন আইটিআই গড়ে তোলা হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে পলিটেকনিক কলেজ। এছাড়া পাঁচ লক্ষ ছেলেমেয়েদের সবুজ সাথী প্রকল্পের আওতায় সাইকেল দেওয়া হয়েছে। সারা বাংলায় এক কোটিরও বেশি। মুর্শিদাবাদে তৈরি হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়।’
এদিন সাগরদিঘির সভা থেকেও ফের এনআরসি বিরোধিতায় সুর চড়ান মমতা। তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘বাইরের নেতারা এসে এনআরসি নিয়ে আপনাদের ভয় দেখাচ্ছে। আমি বলছি, বাংলায় এনআরসি হবে না। আপনারা বাইরের কারও কথায় বিশ্বাস করবেন না। বিশ্বাস করুন আমাদের, যাঁরা আপনাদের জন্য কাজ করে। আপনারা প্রত্যেকেই এদেশের নাগরিক। কাউকে বিতাড়িত হতে দেব না।’ উল্লেখ্য, আজ সভা সেরেই তিনি পৌঁছে যান বাহালনগরে, জম্মু-কাশ্মীরের কুলগামে জঙ্গীদের গুলিতে নিহত শহীদ শ্রমিকদের বাড়িতে। সেখানে পরিবারগুলির সদস্যদের হাতে ৫০ হাজার টাকা করে তুলে দেন মমতা।