জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন দিদিই। তাঁর কারণেই বহু মাওবাদী বাধ্য হয়েছে আত্মসমর্পণ করার জন্য। মাওবাদী দমনে বাংলাই দেশের মধ্যে রোল মডেল। নাহ, রাজ্যের শাসক দলের কোনও নেতা-মন্ত্রী নয়। এবার এমন মন্তব্য করলেন খোদ পড়শি রাজ্যের হেভিওয়েট বিজেপি নেতা ড. শিবনারায়ণ দ্বিবেদী!
উল্লেখ্য, চোখের সামনে মাওবাদীদের হাতে ৩৫ জনকে খুন হতে দেখেছিলেন শিবনারায়ণ দ্বিবেদী। তিনি তখন ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্লার গাড়িতে। জঙ্গলে টেনে নিয়ে যাওয়ার পর সুকমার জঙ্গলে স্কোয়াড সদস্যরা মহেন্দ্র কর্মা-সহ বাকিদের বেপরোয়া ভাবে হত্যা করেন। কিন্তু তৎকালীন কংগ্রেস নেতা দ্বিবেদী মারা গিয়েছেন ভেবে তাঁকে ফেলে চলে যান রামান্নার লোকেরা।
২০১৩ সালের মে মাসে সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ছ’বছর। দল বদলে সেই দ্বিবেদী এখন রাজ্যস্তরের বিজেপি নেতাই শুধু নন, সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর ইন্ডিয়ান মেডিসিনের সদস্য। সম্প্রতি কলকাতায় দলীয় কাজে এসে এ রাজ্যে মাওবাদী দমন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন দ্বিবেদী। তাঁর সাফ কথা, ‘দিদি মাওবাদীদের রুখতে যে পদ্ধতি নিয়েছেন তা ছত্তিশগড়েরও অনুসরণ করা উচিত। তাহলে সাফল্য মিলবে।’
উল্লেখ্য, কলকাতা আসার আগেই ছত্তিশগড়ে সুকমার ঝিরমঘাটিতে সেই হামলার ঘটনা নিয়ে রীতিমত বোমা ফাটিয়েছেন এই বিজেপি নেতা। আদালতের কাছে হলফনামা পেশ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আবগারি দফতরের মন্ত্রী কাওয়ামি লাকমার নার্কো টেস্ট করানো হোক। কারণ, ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আমি এটা বলতে পারি ওই ঘটনায় মাওবাদীরা লাকমাকে খুব ভালো ভাবে চিনত। ওঁদের সঙ্গে লাকমার যোগাযোগ ছিল।’ যা নিয়ে বর্তমানে জোর তরজা শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৫ মে সুকমার ঝিরমঘাটিতে কংগ্রেসের ডাকে পরিবর্তন যাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ প্রায় ৪০টি গাড়ির কনভয়ে হামলা চালায় প্রায় দেড়শ জনের একটি মাওবাদী স্কোয়াড। সেই হামলায় মহেন্দ্র কর্মা, বিদ্যাচরণ শুক্লা, নন্দকুমার প্যাটেল সহ প্রায় ৩৫ জন কংগ্রেস নেতা মারা যান। তৎকালীন কংগ্রেস নেতা শিবনারায়ণকেও টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
কিন্তু একাধিক নেতাকে মারার পর তাঁকে মৃতের মত শুয়ে থাকতে দেখে মাওবাদীরা তিনিও মারা গিয়েছেন বলে কাজ শেষ করে চলে যায়। এর কিছুদিনের মধ্যে ভোটে লড়াই করার জন্য টিকিট না পেয়ে তিনি বিজেপিতে চলে যান।
কলকাতায় এসে শিবনারায়ণ দাবি করেন, ‘আমরা দুটি পৃথক রাজনৈতিক দল করি ঠিকই। কিন্তু মমতা দিদি একদম সঠিক ভাবে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন। বহু মাওবাদী বাধ্য হয়েছে আত্মসমর্পণ করার জন্য। আমাদের রাজ্য সরকার এই বিষয়ে বাংলার কাছ থেকে পরামর্শ চাইতে পারে। তা না করে মাওবাদীদের সুবিধা করে দিচ্ছে।’