‘বুলবুল’ ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা থাকা স্বত্ত্বেও প্রবল ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মাঠে এসেছিলেন সমর্থকরা। শনিবার সন্ধ্যায় প্রায় সাড়ে আট হাজার দর্শক মাঠে এসেছিলেন শুধুমাত্র প্রিয় দলের জয় দেখবেন বলেই। তবে প্রথমার্ধে হতাশই হলেন কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা। স্বপ্নপূরণ হল দ্বিতীয়ার্ধে। ঘরের মাঠে জামশেদপুরকে হারিয়ে আইএসএল টেবলে শীর্ষে ওঠার লক্ষ্যে ৩-৪-১-২ ছকে দল সাজিয়েছিলেন এটিকে কোচ লোপেজ হাবাস। ডিফেন্ডার প্রবীর দাসকে তুলে নিয়ে এসেছিলেন মাঝমাঠে। উদ্দেশ্য, দ্রুত গোল করে বিপক্ষের উপরে চাপ বাড়ানো।
জামশেদপুরের শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিল রক্ষণ মজবুত করে প্রতি আক্রমণে উঠে গোল করা। তাই ৪-২-৩-১ ছকে দল সাজিয়েছিলেন কোচ ইরিয়ন্দো গার্সিয়া। যাতে কোনও মতেই রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়াম, মাইকেল সুসাইরাজরা গোল করতে না পারেন। এটিকের কেউ বল ধরলেই জামশেদপুরের তিন-চার জন তাঁদের ঘিরে ধরছিলেন। তবে শরীর ব্যবহার করে রয় কৃষ্ণদের আটকাতে গিয়ে জামশেদপুরের চার ফুটবলার হলুদ কার্ডও দেখলেন। জামশেদপুরের কোচ স্পেনীয় হলেও এটিকের জয়রথ থামাতে তাঁর রণনীতিতে যেন ছিল ইটালির রক্ষণাত্মক ঘরানার ছাপ!
প্রতিপক্ষের চক্রব্যূহ ভেঙে সাত মিনিটেই অবশ্য এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল এটিকে। ডিফেন্ডার এমার্সন গম্বের ব্যাকপাস বিপন্মুক্ত করতে গিয়ে এটিকে স্ট্রাইকার ডেভিড উইলিয়ামসের পায়ে মারেন জামশেদপুর গোলরক্ষক সুব্রত পাল। বল গোল পোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন সুব্রত। এর এক মিনিটের মধ্যে গতির বিরুদ্ধে গোল করার ভাল সুযোগ পেয়েছিল জামশেদপুর। বাঁ-দিক থেকে ফ্রান্সিসকো মেদিনা বল ভাসিয়ে দিয়েছিলেন এটিকে বক্সে। কিন্তু ফারুখ চৌধুরির অসাধারণ হেড ক্রসবারে ধাক্কা খায়। প্রথমার্ধে এটা ছাড়া আর কোনও সুযোগ পায়নি জামশেদপুর।
অন্যদিকে ম্যাচের ১৯ মিনিটে আরও এক বার এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল এটিকের সামনে। শরীর শূন্যে ভাসিয়ে নেওয়া উইলিয়ামসের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৪১ মিনিটে নেওয়া জয়েশ রানের দূরপাল্লার শটও লক্ষ্যে ছিল না। শেষ অবধি ০-০ অবস্থাতেই প্রথমার্ধ শেষে ড্রেসিংরুমে ফেরে দুই দল।
ছবিটা বদলাতে শুরু করে দ্বিতীয়ার্ধের ৫৭ মিনিট থেকে। নিজেদের পেনাল্টি বক্সের মধ্যে রয় কৃষ্ণকে ফাউল করেন জামশেদপুর ডিফেন্ডার খোসে লুইস এসপিনোসা। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি। গোল করে এটিকে-কে এগিয়ে দেন রয় কৃষ্ণ। ৬৯ মিনিটে ফের গোল করেন তিনি। এ বারও পেনাল্টি থেকে। তারপরেই জবিকে নামান এটিকে কোচ। কিন্তু এটিকে জার্সিতে অভিষেক ম্যাচে গোলের স্বপ্ন যদিও পূরণ হল না তাঁর।
যুবভারতীতে ০-২ পিছিয়ে যাওয়ার পরেই রণনীতি বদলে ফেলেন জামশেদপুর কোচ। আক্রমণাত্মক খেলতে শুরু করেন ফারুখেরা। অবশেষে দেখা গেল তিকিতাকা বনাম তিকিতাকার দ্বৈরথ। ৮৫ মিনিটে ব্যবধান কমান সের্খিয়ো কাস্তেল। পেনাল্টি বক্সের মধ্যে জামশেদপুর স্ট্রাইকারকে ফাউল করেছিলেন এটিকে ডিফেন্ডার আনাস এডাথোডিকা। তবে শেষরক্ষা হল না। ম্যাচের সংযুক্ত সময়ে এটিকের হয়ে গোল করে জামশেদপুরের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেন পরিবর্ত হিসেবে নামা এডু গার্সিয়া।
৪ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ স্থান পুনরুদ্ধারের পরে উচ্ছ্বসিত এটিকে কোচ হাবাস সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, ‘ছেলেদের পারফরম্যান্সে আমি দারুণ খুশি। প্রথম দলে সাত জন নতুন ফুটবলার খেলিয়েছিলাম।’ চলতি আইএসএলে বারবারই রেফারিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন হাবাস। এ দিন রেফারির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ জামশেদপুর শিবির। তাঁদের দাবি, দ্বিতীয় পেনাল্টির সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না। হাবাস বলেছেন, ‘কোনও দিন ভাল যায়। কোনও দিন খারাপ। তবে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে দেখে বোঝা কঠিন, রেফারির পেনাল্টির সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না ভুল।’ এদিন ম্যাচ জিতে ফের লিগ টেবিলের শীর্ষে পৌঁছে গেল হাবাসের এটিকে।