দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা পর অযোধ্যা মামলার অবসান ঘটল আজ। দেশের শীর্ষ আদালতের রায়ে ওই জমিতে মন্দির তৈরি করা যাবে। মসজিদের জন্য আলাদা ৫ একর জমির কথা বলা হয়েছে। তবে এই মামলা একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা বহন করে। মামলার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জায়গা পেয়েছে, এই মামলায় রয়েছে বহু মোচড়, অনেক মোড়, উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার জায়গা নিয়ে একাধিক সংগঠনের আদালতে আইনি লড়াই রয়েছে এই মামলাটিকে কেন্দ্র করে। ১৯৯২-এ পুরানো মসজিদটি ভেঙে দেন হিন্দু সংগঠনের কর্মীরা, তাঁদের বিশ্বাস ওই জায়গাটি ভগবান রামচন্দ্রের জন্মভূমি, দেশজুড়ে সেই হিংসায় প্রায় ২,০০০ জনের মৃত্যু হয়। প্রধানবিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেনে নেওয়া যাক এই সদস্যদের সম্পর্কে কিছু তথ্য-
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে এই মামলার শুনানি চলে। ইনিই দেশের ৪৬তম প্রধান বিচারপতি। অমিতাভ বচ্চনের আয়কর সংক্রান্ত মামলা, অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি চালু, অযোধ্যা জমি বিতর্ক-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দিয়েছেন। বেনজির ভাবে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে যে-চার জন বিচারপতি তৎকালীন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, গগৈ তাঁদের অন্যতম। তাঁর বিরুদ্ধেই আবার যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন শীর্ষ আদালতের এক মহিলা কর্মী।
এছাড়াও এই বেঞ্চে ছিলেন শরদ অরবিন্দ বোবদে। তিনিই দেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগ, আধার, অযোধ্যা জমি বিতর্কের মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলায় বেঞ্চের সদস্য ছিলেন। মুম্বইয়ের মহারাষ্ট্র জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় এবং নাগপুরের মহারাষ্ট্র জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের দায়িত্ব সামলেছেন।
এই বেঞ্চের অন্য এক সদস্য হলেন এস আব্দুল নাজির। কোনও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি না-হওয়া সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত করা হয় তাঁকে। তাৎক্ষণিক তিন তালাক মামলা যে-বেঞ্চে হয়েছিল, তার সদস্য ছিলেন। ওই মামলায় তিন তালাক প্রথাকে ‘সংবিধান-বিরোধী’ তকমা দেওয়ার বিরোধী ছিলেন তিনি। যুক্তি, ইসলামে যার উল্লেখ রয়েছে, তাকে অসাংবিধানিক দাগিয়ে দেওয়াটা ঠিক নয়। ওই প্রথার উপরে ছ’মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়ার পক্ষেই ছিলেন।
এই বেঞ্চের অন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলেন অশোক ভূষণ। ২০০১-এ এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। ২০১৪ সালে কেরল হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। পরের বছর ওই হাইকোর্টেরই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত। ২০১৬ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন। মুম্বইয়ের আরে অরণ্যে গাছ কাটা, দিল্লিতে আমলাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত মামলা-সহ বিভিন্ন বেঞ্চের সদস্য ছিলেন।
এই বেঞ্চের শেষ সদস্য হলেন ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড়।তাঁর প্রধান বিচারপতি হওয়ার সম্ভাবনা। ইলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের দায়িত্ব সামলেছেন। সুপ্রিম কোর্টে আধার মামলায় বেঞ্চের সদস্য ছিলেন। মামলায় পৃথক রায় দিয়ে সতর্ক করেছিলেন, প্রতিটি তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে আধার যুক্ত হলে ব্যক্তিপরিসরের অধিকারে আঘাতের আশঙ্কা থেকে যায়। মূলত আধারের বর্তমান ব্যবস্থার ১০টি গলদের কথা উল্লেখ করেছিলেন।