সপ্তাহ দুয়েক আগেই মুমূর্ষু দুই রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল ও এমটিএনএলের সংযুক্তিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা। সমস্যার সূত্রপাত সেদিন থেকেই। বিএসএনএলের জমি-সহ যাবতীয় সম্পত্তি বিক্রি আর তাঁদের স্বেচ্ছাবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ ছিলেন কর্মীরা। বেশিরভাগ কর্মী সংগঠনেরই সায় ছিল না এতে। এরই মধ্যে জানা গেল, বিএসএনএলের যে সমস্ত কর্মীর বয়স ৫০ বছর বা তার বেশি তাঁরা স্বেচ্ছাবসরের জন্য ৩ ডিসেম্বর অবধি আবেদন করতে পারবেন। হ্যাঁ, সোমবার রাতে এই মর্মেই রাষ্ট্রায়ত্ত স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের (ভিআরএস) বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে টেলিকম সংস্থাটির কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে আরও বিরক্ত কর্মীরা।
উল্লেখ্য, কোনও কর্মী স্বেচ্ছাবসরের জন্য আবেদন করলে তিনি এককালীন (এক্স-গ্রাসিয়া) যে অর্থ পাবেন, তা তাঁর অবশিষ্ট চাকরিজীবনের মূল বেতন ও মহার্ঘ ভাতার থেকে বেশি হবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এক্স-গ্রাসিয়া হিসাবে কর্মীরা পাবেন প্রতি বছর ৩৫ দিন হিসাবে যত বছর চাকরি করেছেন তার মাইনে এবং প্রতি বছর ২৫ দিন হিসাবে অবশিষ্ট চাকরিজীবনের মাইনে। ধরা যাক, কোনও কর্মী বা আধিকারিক বিএসএনএল-এ ২৫ বছর চাকরিজীবন সম্পূর্ণ করার পর ৫০ বছর বয়সে ভিআরএস-এর আবেদন করলেন। সে ক্ষেত্রে তিনি ২৫ বছর চাকরিজীবনের প্রতি বছর ৩৫ দিনের হিসাবে ৮৭৫ দিনের মূল বেতন ও মহার্ঘ ভাতা এক্স-গ্রাসিয়া হিসাবে পাবেন।
এছাড়া, তাঁর যে ১০ বছর চাকরিজীবন বাকি থাকল, তার প্রত্যেক বছরের ২৫ দিনের হিসাবে আরও ২৫০ দিনের এক্স-গ্রাসিয়া বাবদ অর্থ পাবেন। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে ওই কর্মী বা আধিকারিক সাড়ে ৩৭ মাসের মূল বেতন ও মহার্ঘ ভাতা পাবেন দুই কিস্তিতে। এককালীন এই অর্থ ছাড়াও গ্র্যাচুইটি এবং পেনশনের টাকাও পাবেন স্বেচ্ছাবসরের আবেদনকারী কর্মীরা। কর্মীর বয়স ৫৫ বছর বা তার কম হলে তিনি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আর বয়স ৫৫ বছরের বেশি হলে তাঁর ৬০ বছর বয়স হওয়ার পর গ্র্যাচুইটির টাকা পাবেন বলে বিএসএনএল জানিয়েছে। আর স্বেচ্ছাবসরের জন্য আবেদন করা কর্মী, আধিকারিকের পেনশন ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারির পর থেকেই চালু হয়ে যাবে। কিন্তু, ওই পেনশনের পরিমাণ বর্তমান বেতনের ১২৫ শতাংশের বেশি হবে না।
সবমিলিয়ে এই স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প একেবারেই আকর্ষণীয় নয় বলে মনে করছে সংস্থার কর্মী, আধিকারিকদের বিভিন্ন সংগঠন। তাঁদের দাবি, এই প্রকল্পে বিশেষ সাড়া পড়বে না। অল ইউনিয়নস অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনস অফ বিএসএনএল কলকাতা সার্কলের আহ্বায়ক শিশির রায়ের যুক্তি, ‘কেউ ৫০ বছর বয়সে স্বেচ্ছাবসর নিলে তিনি তিন বছর দেড় মাসের বেতন এক্স-গ্রাসিয়া হিসাবে পাবেন। এমনকী, নতুন পে রিভিশন হলে তিনি পেনশনের সেই বৃদ্ধি পাবেন না। তাঁর শেষ পাওয়া বেতন অনুযায়ীই পেনশন পাবেন। আর শর্তানুযায়ী, স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার পর কেউ কোনও সরকারি সংস্থায় কাজে যোগ দিতে পারবেন না।’ তাঁর মতে, যে সমস্ত কর্মী অসুস্থতার কারণে নিয়মিত অফিস করতে পারছেন না বা নিজেরা ব্যবসা করতে চাইছেন, তাঁরা বাদে আর কেউই ভিআরএস-এর জন্য আবেদন করবেন না। কারণ অন্যদের ক্ষেত্রে তা বিশেষ লাভজনক হবে না।