ছিল রুমাল, হল বিড়াল। এমনই অবস্থা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পুত্রের সংস্থা কুসুম ফিনসার্ভ লিমিটেডের। সারা দেশে যেখানে আর্থিক মন্দার হাল, সেখানে অস্বাভাবিক হারে ব্যবসার বৃদ্ধি হয়েছে অমিত পুত্র জয় শাহের। ২০১৪ সালে প্রথম বার মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত পাঁচ বছরে তাঁর সংস্থার আয় ১৫০০০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে। বিষয়টি সামনে আসতেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, দেশ জুড়ে যখন অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তখন কোন মন্ত্রবলে নিজের সম্পত্তি এত বাড়িয়ে নিলেন অমিত পুত্র?
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের একটি তালিকা উদ্ধৃত করে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ‘দ্য ক্যারাভান’ পত্রিকা। তাতে দেখা গিয়েছে, ২০১৪ সালে জয় শাহের সংস্থা কুসুম ফিনসার্ভ লিমিটেডের মোট আয় ছিল ৭৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে তা বেড়ে ১১৯ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা হয়েছে। সেই সঙ্গে জানা যায়, সংস্থার আয় বাড়লেও ২০১৭ ও ২০১৮ সালে তাঁর হিসাব দেখাননি জয় শাহ। অতি সম্প্রতি সেই সংক্রান্ত তথ্য জমা করেন তিনি।
জয় শাহের ব্যবসা বৃদ্ধি নিয়ে গতকাল টুইটারে বিজেপিকে কটাক্ষ করেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীও। ফারুখ আবদুল্লাকে নিয়ে সংসদে অমিত শাহের মন্তব্য টেনে বলেন মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে খুব শীঘ্র রিপোর্টটি তুলে নেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে শুক্রবার দিল্লীতে দলের সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেন কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা। তিনি বলেন,‘‘আপনার, আমার মতো মানুষ হিসাব না দেখালে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হত। পাঁচ লক্ষ টাকা পেনাল্টি ঘাড়ে চাপত। কিন্তু যুবরাজ জয় শাহ নিয়ম-কানুনের ঊর্ধ্বে। তাই ২০১৭ ও ২০১৮ সালের হিসাব দেখাননি উনি। লোকসভা নির্বাচন না মেটা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন।’’
হিসাব জমা দেওয়ার জন্য জয় শাহকে কেন নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করত হল, সেই প্রশ্নও তোলেন পবন খেরা। তাঁর কথায়, ‘‘নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত ওঁকে কেন অপেক্ষা করতে হল, তা জানতে হবে আমাদের। ২০১৪-য় কুসুম ফিনসার্ভ লিমিটেডের মোট বার্ষিক আয় ছিল ৮০ লক্ষ। ২০১৯-এ তা ১১৯ কোটি ৬০ লক্ষ হয়ে গেল। আবার ২০১৭-য় ১৪৩ কোটি পর্যন্তও উঠেছিল। যুবরাজ শাহ এবং তাঁর পরিবারের ওই সংস্থা কী ব্যবসা করেন, তা কারও জানা নেই। কী এমন ব্যবসা করেন ওঁরা, মাত্র কয়েক বছরেই যার ব্যবসা ১৫০০০ শতাংশ বেড়ে যায়? কীসের ব্যবসা করেন তা আজও খোলসা করেননি উনি। কখনও শুনি লেনদেনের ব্যবসা, কখনও শুনি কৃষিপণ্য বিক্রি করেন আবার কখনও শুনি পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেন। কী ব্যবসা করেন তা জানি না, তবে যে মন্ত্রবলে ফুলেফেঁপে উঠছেন, তাতে দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট নেই বলে মনে হতে পারে।’’ সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেও বিষয়টি তুলবেন বলে জানিয়েছেন খেরা।