স্পেনের আলতামিরা গুহায় প্রথম প্রাগৈতিহাসিক মানুষের আঁকা ছবি আবিষ্কৃত হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দেশেও যে কয়েক প্রাচীন গুহাচিত্রের খোঁজ মিলেছে। মধ্যপ্রদেশের তেমনই এক গুহায় দেখা পাওয়া গিয়েছে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের অনবদ্য শিল্পসম্ভার। যা সৃষ্টি করা হয়েছিল প্রস্তর যুগ থেকে নিয়ে মধ্য যুগ অবধি সময়ে। এই জায়গাটির নাম হ’ল ভীমবেটকা শৈলাশ্রয়। অজ্ঞাতবাসের সময় পাণ্ডবরা নাকি কিছুদিন এখানে ছিলেন ও ‘ভীমবেটকা’ নামটি আসলে ‘ভীম বৈঠকা’-র (অর্থাৎ ভীমের বিশ্রাম স্থল-এর) অপভ্রংশ। এখানকার শৈলাশ্রয়ে পাওয়া গিয়েছে আদিম মানুষের আঁকা রাশিরাশি গুহাচিত্র। এবার ইট কাঠ কংক্রিট ছেড়ে প্রকৃতিতে ডুব দিতে চাইলে, প্রাগৈতিহাসিক মানুষের বাসস্থান তাদের শিল্প চাক্ষুষ করতে ঘুরে আসাই যায় মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকায়।
এই শৈলাশ্রয়ে মানুষের বাস ছিল লক্ষ বছরেরও আগে থেকে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হ’ল এই শৈলাশ্রয়ের অস্তিত্ব জানা গিয়েছে মাত্র ষাট বছর আগে, আর তাও বেশ কাকতালীয়ভাবে। উজ্জয়িনীর বিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ববিদ ডাঃ ভি এস ওয়াকঙ্কার ট্রেনে করে ভোপাল যাওয়ার সময় ভীমবেটকার পাহাড়ের গঠনের সঙ্গে ফ্রান্স ও স্পেন-এ দেখা আদিম মানুষের আশ্রয় যেমন পাহাড়ে ছিল তার মিল দেখতে পান। অল্পদিনের মধ্যে তাঁর নেতৃত্বে একদল পুরাতত্ত্ববিদ ভীমবেটকায় অভিযান শুরু করে সত্যিই খুঁজে পান প্রাগৈতিহাসিক মানুষের শৈলাশ্রয়।
এই অঞ্চলে সাতশ’র কিছু বেশি গুহা আবিষ্কৃত হয়েছে। তার মধ্যে চারশ’টিতে আছে গুহাশ্রয়ী মানুষের আঁকা ছবি। নমুনা পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে যে ভীমবেটকার পাথরের মেঝে ও দেওয়াল পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো বাসস্থান। এছাড়া শুঙ্গ, কুশান ও গুপ্ত যুগের কিছু শিলালেখও এখানে পাওয়া গেছে। ২০০৩ সালে ইউনেস্কো ভীমবেটকাকে “ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সাইট” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
মধ্যপ্রদেশের রাইসেন জেলায় ১০ কিমি লম্বা ও ৩ কিমি চওড়া এই জায়গাটি ভোপাল থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ–পূর্বে অবস্থিত। শাল-সেগুনের জঙ্গলে ভরা বিন্ধ্যপর্বতের উপত্যকায় অবস্থিত ভীমবেটকা প্রত্নতাত্ত্বিক, সমাজবিজ্ঞানী ও পর্যটক সবার কাছেই অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বৌদ্ধধর্মের কিছু নিদর্শন আছে বলে ভীমবেটকার নাম ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগে ১৮৮৮ সালে নথিভুক্ত করা হয়। কিন্তু পরবর্তীকালের এক আবিষ্কারের ফলে এখন ভীমবেটকার প্রসিদ্ধি অন্য কারণে। এখানে শুধু যে ভারতের সবথেকে পুরনো প্রাগৈতিহাসিক যুগের গুহাচিত্র রয়েছে তা-ই নয়, এটি ভারতের মানব জাতির প্রাচীনতম আশ্রয়স্থলও বটে।