বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের অবিচ্ছেদ্য একটি অঙ্গ এবং অংশের নাম শাকিব আল হাসান। বাংলাদেশে নিজেদের ঘরের মাঠ হোক, বা বিশ্বের যে কোনও ক্রিকেট মাঠ- বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নামা টিমের কাছে শাকিব মানেই বড় মাপের মানসিক চাপ। অজস্রবার একার ক্ষমতায় ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের নামের পাশে এত বছর লেখা হয়েছে নতুন নতুন রেকর্ডের তালিকা। এইবছরে বিশ্বকাপেও একের পর এক রেকর্ড গড়েছেন তিনি। এবার তিনিই পড়লেন আইসিসির কোপে।
নিষেধাজ্ঞার খবর আইসিসি জানানোর পরে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে অধিনায়ক শাকিব রাত সওয়া ৮টা নাগাদ মুখ খুললেন। বললেন, “ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হওয়ায় আমি সত্যিই দুঃখিত। কিন্তু ম্যাচ গড়াপেটার প্রস্তাব পাওয়ার কথা গোপন করার শাস্তি আমি মেনে নিয়েছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভরশীল আইসিসির দুর্নীতি দমন শাখা। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতে নিজের দায়িত্ব আমি পালন করতে পারিনি।” এই সময়ে আইসিসির কাছে দেওয়া বিবৃতিটিও পড়লেন শাকিব আল হাসান।
শাকিবের এই শাস্তিতে মন ভার বাংলাদেশের বোর্ড চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপনেরও। বিবৃতি দেওয়ার সময়ে মর্মাহত নাজমুল জানান, তিনি শাকিবের পাশে আছেন এবং থাকবেন। তিনি বলেন, “আমরা অবশ্যই শকড। শকড হওয়ার মতো এর চেয়ে বড় খবর আর নেই।” তিনি বললেন, “আমি অনেকবার বলেছি, দু’জন খেলোয়াড়ের বিকল্প আমাদের নেই। একজন মাশরাফি, আরেকজন শাকিব। তাঁদের বিকল্প কাউকে পাব কিনা জানি না। ও খেলতে পারছে না, এতেই আমরা শকড।” বাংলাদেশের বোর্ড সভাপতির দাবি, আইসিসির দুর্নীতি দমন শাখা যে শাকিবকে ডেকেছে তিনি এই খবর জানতেন না। তাঁর কথায়, “আমরা কিছুই জানি না। শুধু শাকিবের সঙ্গেই ওরা দেখা করেছে। আমরা শুধু রেজাল্ট জানতে পেরেছি। দুই-তিন দিন আগে ধর্মঘটের পর শাকিবই প্রথম বলল।”
শাকিবের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন বিসিবি প্রধান। চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডারের পাশে থাকার বিষয়ে পাপন বললেন, “আমি মনে করি, সবারই শাকিবের পাশে থাকা উচিত। ওর ভেঙে পড়ার কোনও কারণ নেই। সব সময় বিসিবি পাশে থাকবে। আরও শক্তিশালী ও বুদ্ধিদ্বীপ্ত ক্রিকেটার হিসেবে ও খুব শিগগিরই ক্রিকেটে ফিরবে আশা করি। আমরা আশাবাদী, নিষেধাজ্ঞা শেষে ফিরে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে ও। আইসিসির এই সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে এবং ক্রিকেটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের মতোই আমাদের শক্ত অবস্থান।”
মঙ্গলবার বিকেলে ন্যাম সম্মেলন শেষে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সেই সময়ে আইসিসির শাস্তি ঘোষণার খবর না এলেও একটি সংবাদপত্রের খবর ধরে আলোচনায় প্রথমেই উঠে আসে শাকিব আল হাসানের বিষয়ে প্রশ্ন। উত্তরে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, “শাকিবের ভুল ছিল, বেশি কিছু করার নেই। তবে আমি ও বিসিবি শাকিবের পাশে থাকব। ওকে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে। এই ধরনের ক্রিকেটারদের সঙ্গে জুয়াড়িরা যোগাযোগ করে। ও খুব একটা বিষয়টাকে গুরুত্ব দেয়নি। ফলে আইসিসিকে বিষয়টি জানায়নি। নিয়ম হল, ওর সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টা জানানো উচিত ছিল। এখানে ও একটা ভুল করেছে। এ ক্ষেত্রে আপনারা জানেন, আইসিসি যদি কোনও ব্যবস্থা নেয়, আমাদের খুব বেশি কিছু করার সুযোগ থাকে না। তবু আমরা বলব, বিশ্ব ক্রিকেটে তার একটা অবস্থান আছে। একটা ভুল করেছে এবং সেটা ও বুঝতেও পেরেছে। এখানে খুব বেশি কিছু করার নেই আমাদের।”