আজ বুধবারই কাশ্মীর থেকে বাংলার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা ছিল ওঁদের। রওনা শুরুও করেছেন ওঁরা। তবে জীবিত নয়। কাশ্মীর থেকে রওনা হয়েছে বাংলার ৫ শ্রমিকের নিথর কফিনবন্দী দেহ। মুর্শিদাবাদ জুড়ে এখন এখন শোক-হাহাকারের মধ্যেই মিশে তীব্র আক্ষেপ, আর কয়েকটা ঘণ্টা পেলেই বেঁচে যেত ওরা!
ঘোর কাটেনি বছর কুড়ির মাবিয়া বিবির। মাটির দাওয়ায় শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকা মাবিয়া মাঝে মাঝেই অস্ফুটে বলে উঠছেন ‘…আজই তো ট্রেনে চাপার কথা ছিল’। পাশেই বসেছিলেন মাবিয়ার জা রেশমা বিবি। তিনি বলেন, ‘সোমবারই মাবিয়াকে ফোন করেছিল আমার দেওর রাফিকুল। বলেছিল, মঙ্গলবার রওনা দেবে, তা না হলে বুধবার ভোরবেলা…’। একই কথা জানতেন বছর ৫৬-র রফিক শেখের স্ত্রী-ও। তাঁদের ছোট মেয়ে পরভীন
জানালেন, ‘আব্বুরা তো গতকাল রাতেই মালপত্র, ব্যাগ বেঁধে রেডি করে রেখেছিল। আজ ভোরবেলা রওনা দেবে বলে গাড়িও বুক করে রেখেছিল’। পরভীনের কথাতেই জানা গেল, গত দশ বছর ধরে কাশ্মীরে যাচ্ছেন রফিক শেখ, দুটো পয়সা বাড়তি আয়ের জন্য।
আর এই একটু বেশি রোজগারের টানেই কাশ্মীর পাড়ি দেন এখানকার মানুষ। বাকের আলির আক্ষেপ, ‘ভাইটাকে এ বার না করেছিলাম যেতে। এখানে কখনও জমিতে কাজ করত, নয়তো মোটর ভ্যান চালাত। রোজগার ভাল হচ্ছিল না গত কয়েক মাস ধরেই। এর মধ্যে ভাইয়ের বড় মেয়ে রহিমার কিডনির অসুখ ধরা পড়ল। মেয়েটার চিকিৎসা করানোর জন্যই সবাই বারণ করার পরও জোর করে গেল কামরুদ্দিন’।
সকাল গড়িয়ে দুপুর। একের পর এক সরকারি আধিকারিক এবং রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা চলছে গ্রামে। সকালে গ্রামে গিয়েছিলেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। সন্ধেয় যাচ্ছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। গ্রামের মানুষরা খোঁজ নিচ্ছেন কখন মৃতদেহ এসে পৌঁছবে। তার মধ্যেই গ্রামের মানুষদের কাছে খবর এসেছে, মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন – মৃতদের প্রত্যেকের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে এককালীন সাহায্য করবে রাজ্য সরকার।