অবশেষে জিতেই গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যের রাজনীতি। যার ফলে অবসান ঘটল রাজ্য-রাজ্যপালের মধ্যে চলতে থাকা সংঘাতের। প্রত্যাশিত ভাবেই রবিবার সন্ধ্যায় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কালীপুজোয় সস্ত্রীক যোগ দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। পেলেন উষ্ণ অভ্যর্থনা। দু’ঘণ্টারও বেশি সময় সেখানে কাটানোর পর রাজ্যপাল জানান, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির এই পুজোয় এসে তিনি অভিভূত।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে রাজ্যপালের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক ঘটনায় ধনকড়ের সঙ্গে সংঘাত বেধেছিল রাজ্য সরকারের। তবে রাজ্যের নব নিযুক্ত রাজ্যপাল যখন উঠতে বসতে তাঁর সরকারকে তুলোধনা করছেন, তখন তাঁকেও বাড়ির কালীপুজোর জানিয়ে নিজের উদার ভাবমূর্তির পরিচয় দেন মমতা। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ সস্ত্রীক রাজ্যপাল পৌঁছলে বাড়ির দরজা থেকে তাঁকে নিজের ঘরে নিয়ে যান তিনি স্বয়ং। জানা গেছে, মমতার যে ছোট ঘর দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী-সহ অনেকেই, সেই তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছেন ধনকড়ও।
মমতার বাড়ির পুজোমণ্ডপেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে রাজ্যপাল বলেন, একজন মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে ও রকম ছোট ঘরে থাকেন? শুধু তাই নয়। পার্থকে জড়িয়ে ধরে তিনি বলেছেন, ‘আমরা খুব ভাল বন্ধু। এই বন্ধুত্ব যেন বজায় থাকে।’ মুখ্যমন্ত্রীও গতকাল রাজ্যপালকে বলেন, পার্থবাবুই রাজ্যপালের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগের সেতু। উত্তরে রাজ্যপাল বলেন, ‘আমি তা জানি। উনি আমার বন্ধু। উনি আপনার এক জন দক্ষ এবং সম্ভাবনাময় সহকর্মী।’ পার্থকে রাজভবনে যাওয়ার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
কালীঘাটে গিয়ে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে মিনিট দশেক কাটান রাজ্যপাল। তার পরে রাজ্যপালকে মমতা নিয়ে যান পুজোর মূল মণ্ডপে। সেখানে পার্থ এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশিই রাজ্যপাল সৌজন্য বিনিময় করেন একটি বৃদ্ধাবাসের বাসিন্দাদের সঙ্গে। পুজোমণ্ডপেই বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের ডিজি বীরেন্দ্র এবং অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে কথা হয় রাজ্যপালের। মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের কন্যাকে নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন, প্রণামও সারেন।
ততক্ষণে পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। দেবীপ্রতিমার আরতির পর পঞ্চপ্রদীপ নিয়ে আমন্ত্রিতদের সামনে ঘোরান মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপাল সেই প্রদীপের ওম নেন। এর কিছুক্ষণ পরে আবার নিজেই এসে রাজ্যপালকে চা পরিবেশন করেন। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে সন্ধ্যা থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর নিজের লেখা নানা গান বাজছিল। সেই গান শুনে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সিডি চেয়েছেন রাজ্যপাল। পরে তাঁর মন্তব্য, ‘এই পরিবেশে এসে আমি অভিভূত। আমার আর মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব সুন্দর মিলে গিয়েছে। সেটা একই পথে আছে।’