বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির বিপ্লব স্মৃতি অ্যাথলেটিক ক্লাব দিয়েই কালীপুজোর উদ্বোধন শুরু করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরেই শহরের একগুচ্ছ পুজো উদ্বোধন করলেন তিনি। গতকাল কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সোজা গিরিশ পার্কে ৬ পল্লী ৫ স্টার স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোমণ্ডপে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান জোড়াসাঁকোর বিধায়ক স্মিতা বক্সি, তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বক্সি ও সৌম্য বক্সি। ৬০ বছরের এই পুজোর প্রতিমা উদ্বোধন করে মঞ্চে এসে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘বিভেদের রাজনীতি আমরা করি না। আমরা বিভেদ চাই না। নজর রাখতে হবে, কেউ যেন বিভেদ ও সন্ত্রাস না করতে পারে।’
গতকাল মোট ৪টি পুজো উদ্বোধন করেন মমতা। এগুলি হল গিরিশ পার্ক ৬ পল্লী ৫ স্টার স্পোর্টিং ক্লাব, এসএন ব্যানার্জি রোডে সম্মিলিত কালীপুজো, শেক্সপিয়র সরণিতে ইউথ ফ্রেন্ড ও হরিশ মুখার্জি রোডে ভেনাস ক্লাব। তবে দীপাবলীর মরশুমে পুজো উদ্যোক্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেওয়া বৃষ্টির ভ্রকুটি নিয়ে মমতা বলেন, ‘আকাশ খুব গম্ভীর। আমার মনে হয় কাল দুর্যোগ কেটে যাবে। বাংলাদেশের দিকে চলে যাচ্ছে নিম্নচাপ।’ ঐক্যর বার্তা দিতে তিনি এ-ও বলেন, ‘আপনারা দুর্গা পুজোর মতো শান্তিপূর্ণভাবে কালীপুজো পালন করুন। সকলেই বলে কালীপ্রতিমা হচ্ছে আলোর দেবী। সকলের হৃদয় আলোকিত করে। এই সময় ঝগড়া, অশান্তিতে কেউ যেন জড়িয়ে না পড়ে। আমরা অমানবিক নই, মানবিক। দানবিকতার সঙ্গে লড়াই করে মানবিকতা দেখাই। বাংলাই যে আগামী দিনে বিশ্বসেরা হবে, সেটা আমরা প্রমাণ করে দেব।’
এরপর শেক্সপিয়র সরণিতে গিয়ে ইউথ ফ্রেন্ড ক্লাবের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, ‘প্রতি বছর আমি এখানে আসি। আমার ভাল লাগে। রাজীবদা এই পুজো শুরু করেছিলেন। ভারত সেবাশ্রমের দিলীপ মহারাজও উপস্থিত থাকেন।’ জানবাজারে প্রতিমা উদ্বোধন করে তিনি বলেন, ‘এখানে এলেই আমার খুব রানি রাসমণির কথা মনে পড়ে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করেছিলেন। ভয় পাননি। দক্ষিণেশ্বরের মন্দির তিনিই তৈরি করেন।’ আবার ভবানীপুরে ভেনাস ক্লাবের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, ‘এই ভবানীপুর থেকেই উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছিল। আমি তখন দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ। সাংসদ তহবিল থেকে এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রচুর অর্থ দিয়েছিলাম…এই এলাকায় রাজস্থান, বিহার, গুজরাত ও শিখ বন্ধুরা বাস করেন। আমরা একসঙ্গে থাকি।’
অন্যদিকে, হরিশ মুখার্জি রোডে আলো লাগানো নিয়ে প্রথমের দিকে যে সমালোচনা মমতাকে শুনতে হয়েছে, গতকাল সেকথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। আর গিরিশ পার্কে গিয়ে মমতা বলেন, ‘দক্ষিণেই দুর্গাপুজো উদ্বোধন করি বেশি। তাই, কালীপুজোর সময় উত্তরে আসি। গিরিশ পার্কের পুজোয় আসতে আমার ভাল লাগে। এখানে অনেক বিভিন্ন ধর্মের মানুষজন থাকেন। নিজেদের ভাষাতে কথা বললেও তাঁরা বাংলা ভাষাকেই আপন করে নিয়েছেন। কালীপুজোর পরেই ছটপুজো, আমি বিভিন্ন ঘাটে যাই। ছটপুজো উপলক্ষে ছুটিও দেওয়া হয়েছে। বড়দিন উৎসবেও আমাকে যেতে হয়। এছাড়া ১ জানুয়ারি নতুন বছরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে থাকতে হয়। আগে আমরা জানতাম, ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। এখন ৩৬৫ দিনই চলে অনুষ্ঠান।’