বিজেপির এক অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ এনআরসি, যার জেরে আসামে এক ধাক্কায় ঘর ছাড়া হয়েছেন ১৯ লক্ষ মানুষ। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ এখন নিজভূমে পরবাসী। ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অজানা। বলা হচ্ছে এই ১৯ লক্ষ মানুষ ভারতীয়ই নয়। তাঁদের বাংলাদেশি বলেও অভিহিত করা হচ্ছে। এনআরসি ইস্যুতে বারংবারই বাংলাদেশে নাম উল্লেখ করছেন বিজেপি নেতারা। যার জেরে তীব্র আশঙ্কায় বাংলাদেশের মানুষজন। ইতিমধেই ওপার বাংলা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে যে কিসের ভিত্তিতে এই ১৯ লক্ষ মানুষকে বাংলাদেশি বলা হচ্ছে?
বিজেপির তাবড় নেতারা এনআরসি প্রসঙ্গে বলতে গেলেই টেনে আনছেন বাংলাদেশের নাম। এক আধবার নয়, বার বার। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজস্থানের জনসভায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ‘উইপোকা’ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, ‘‘ওরা ভারতীয় যুবকদের রুটিরুজি, চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। গরিবের খাবারে ভাগ বসাচ্ছে।’’ দেশের একাধিক জায়গায় সভা করে তিনি এই অনুপ্রবেশকারী তত্ত্ব জোর গলায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। যে কারণে এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ উৎকণ্ঠায় আছে।
এই বিয়য়ে প্রাক্তন বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মহম্মদ শফিউল্লাহ বলেন, ‘‘অসমে এনআরসি-র কারণে আনুমানিক ১৯ লাখ বাংলা ভাষাভাষী ভারতীয়ের নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিপুল সংখ্যক বাংলা ভাষাভাষীকে অবৈধ বাংলাদেশি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে উচ্চ মহল থেকে বিভিন্ন ভাবে প্রচার করা হচ্ছে। এই ঘোষণার ফলে তীব্র সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, বিজেপিকে কটাক্ষও করা হচ্ছে যে এনআরসি ইস্যুতে বারংবার কেন বাংলাদেশকে টানা হচ্ছে?
বাংলাদেশের তরফে বক্তব্য, ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে অত্যন্ত তিক্ত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের। যদিও বলা হচ্ছে এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের আতঙ্কের কোনও কারণ নেই কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এনআরসি নিয়ে ভারতের মৌখিক আশ্বাসে সাধারণ মানুষ ভরসা রাখতে পারছে না। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারতের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আভাস মিলতে শুরু করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মোহসীনের বক্তব্য, এনআরসি নিয়ে তাঁদের উদ্বেগের জায়গাটি বিভিন্ন পর্যায়ের। তাঁর মতে, রাজনীতি এবং সমাজের সাম্প্রদায়িকরণ এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীল অবস্থার উপর এমন ঘটনার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। মোহসীনের কথায়, ‘‘মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। তাই বিজেপি নেতাদের ইসলামবিরোধী বক্তব্যের প্রভাব সেখানে কিছুটা হলেও পড়ে।’’ দ্বিতীয় বিষয় হিসেবে তিনি তুলে ধরলেন, ইসলামবিরোধী নানা বক্তব্যে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ইন্ধনদাতাদের সুযোগ করে দিতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘এই বিষয়টি অসহিষ্ণু চেতনাকে উস্কে দেবে এমন আশঙ্কাও থাকে।’’ তৃতীয় বিষয় হিসেবে তিনি বলছেন, ‘‘সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে দিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই হতে পারে অন্যতম পদক্ষেপ। কিন্তু এনআরসি-র মতো বিষয় এবং বিজেপি নেতাদের বিভিন্ন উস্কানি দেওয়া কথাবার্তা সেই সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করার ভয় তৈরি করছে।’’
ভারতের এনআরসি নিয়ে যেমন বাংলাদেশের আলোচনাসভা, সমিতি বা সেমিনারে আলোচনা রয়েছে, তেমনই সরগরম সোশ্যাল মিডিয়াও। মোদীর বক্তব্য স্বস্তি দিলেও শঙ্কার ছায়া রয়েছে এ দেশে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রচলিত ভারত বিরোধিতার কার্ডের যে ব্যবহার, সেখানেও এনআরসি শব্দটি নিয়ে বিস্তর আলোচনাও চলছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপির ওপর ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ।