‘আমরা এনআরসি চাই না। আমরা সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল নিয়ে জাতিগত ভাবে, ভাষাগত ভাবে বিরোধ করতে চাই না।’ শিলিগুড়িতে কালীপুজোর উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে এবার এই বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পাশাপাশি, দেশের নাগরিককে বিদেশি বানানোর জাতীয় নাগরিকপঞ্জী এবং নাগরিক সংশোধনী বিল প্রতিহত করতে উত্তরবঙ্গের মানুষ যে তৈরি, এ কথা তিনি বিশ্বাস করেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
উদ্বাস্তু হিন্দুরা শরণার্থী, মিলবে নাগরিকত্ব— বিজেপির খেলা এহেন ‘ট্রাম্প কার্ড’কে ভরসা করে এই শিলিগুড়ি মাত্র চার মাস আগে ভরিয়ে দিয়েছিল পদ্মশিবিরের ভোটবাক্স। কিন্তু প্রতিবেশী আসামে এনআরসির ভিত্তিতে ১২ লক্ষ হিন্দুর নাম বাদ যাওয়ায় অনেকটাই ফাটল ধরেছে সেই বিশ্বাসে। এহেন একটি জটিল আবর্তে গতকাল সন্ধ্যায় দার্জিলিং মোড়ের কাছে হিলকার্ট রোডে বিপ্লব স্মৃতি অ্যাথলেটিক ক্লাবের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষের কালীপুজোর উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে মমতার প্রশ্ন, কী, উত্তরবঙ্গ তৈরি তো? এনআরসি এবং নাগরিক সংশোধনী বিল ঠেকাতে প্রস্তুত তো? কালো মাথার ভিড় সমস্বরে জবাব দিয়েছে, হ্যাঁ, সবাই তৈরি।
উল্লেখ্য, এই প্রথম উত্তরবঙ্গে কোনও পুজোর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। কার্শিয়াং থেকে শিলিগুড়িতে ফেরার পথেই সরাসরি বিপ্লব স্মৃতি অ্যাথলেটিক ক্লাবের পুজোমণ্ডপে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী। ফিতে কেটে প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজোর উদ্বোধন করেন। মণ্ডপের পাশেই তৈরি ছোট মঞ্চে তখন মু্খ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর আয়োজন করেছেন উদ্যোক্তারা। নিজের ভাষণের পুরোটা জুড়েই শান্তি ও ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘দুর্গাপুজোয় কোনও ঘটনা ঘটেনি, এর জন্য আমরা গর্বিত। এটাই হচ্ছে বাংলায় সবচেয়ে বড় সাফল্য।’ কালীপুজোও একই ভাবে ভাল করে করার আহ্বান জানান তিনি।
ঐক্যের বার্তা দিতে গিয়ে তিনি জানান, এ রাজ্যে প্রত্যেকটা পুজোতে হিন্দু, মুসলমান, শিখ খ্রিস্টান, জৈন, পারসিক, বৌদ্ধ, নেপালি রাজবংশি, কামতাপুরি সকলেই যোগ দেয়। তাঁর কথায়, সব মানুষকে নিয়ে যেমন একটা পরিবার, তেমনই হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ সবাইকে নিয়েই দেশ। বাংলাটাও তেমনই। এখানে সবাই থাকবে। এরপরই মমতা তুলে ধরেন এনআরসি প্রসঙ্গ। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এনআরসি চাই না, নাগরিক সংশোধনী বিল চাই না। বাংলায় সবাই থাকবে। কাউকে তাড়াতে দেব না। বাংলায় ধর্মের ভিত্তিতে, বর্ণের ভিত্তিতে কোনও ভাগাভাগি হবে না।
এই সফরের প্রথম দিনেও শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের মাঠ থেকে এনআরসির বিরুদ্ধে বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দেন, রাজ্যে কোনও এনআরসি হচ্ছে না। পরের দিন উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নাকচ করে দেন রাজ্যে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির সম্ভাবনাও। আর এবার তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দেন, ‘আমরা চাই বাংলায় সবাই শান্তিপূর্ণ ভাবে, সুন্দর ভাবে বসবাস করবে, কোনও ভেদাভেদ থাকবে না, কোনও হিংসা থাকবে না, কোনও জাতিভেদ থাকবে না, কোনও বর্ণবৈষম্য থাকবে না, কোনও অস্পৃশ্যতা থাকবে না, কোনও সন্ত্রাস থাকবে না।’ শেষে জনতাকে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসবাণী— নিশ্চিন্তে থাকুন, হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই।