আবারও গেরুয়া হাওয়া। ফের ক্ষমতায় আসছে বিজেপি-শিবসেনা জোট। তবে সেই হাওয়ার দাপট কিছুটা হলেও স্তিমিত। আসন সংখ্যা কমছে। লোকসভা ভোটে দেশ জুড়ে উঠেছিল গেরুয়া ঝড়। কিন্তু মাত্র ৫ মাসের মধ্যেই বদলে গেল সেই চিত্র। আজ মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানা বিধানসভা ভোটের গণনার পরে আর উঠল না মোদী ঝড়। মহারাষ্ট্রে বিজেপি–শিবসেনা জোট পুনরায় ক্ষমতায় ফিরলেও নিজেদের ১৬টি আসন বাড়িয়ে সেই জোটকে জোরাল ধাক্কা দিয়েছে কংগ্রেস–এনসিপি জোট।এই ধাক্কাই বলে দিচ্ছে মানুষের আস্থা হারাচ্ছে বিজেপি শিবির। তাই ক্ষমতায় ফিরলেও একথা দিনের আলোর মত স্পষ্ট মানুষ আর গেরুয়া জুমলায় ভুলছেন না।
মহারাষ্ট্রে বিজেপির আসন কমে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই দর কষাকষি শুরু করে দিয়েছে শিবসেনা। হরিয়ানায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার কোনও লক্ষণ নেই কোনও দলেরই। বিজেপি একাই সরকার গঠনের যে আশা করেছিল তা কোনওভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। জোটে শিবসেনার প্রভাব বাড়তে চলেছে বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। একটি সূত্রে এমন খবরও মিলছে যে আড়াই বছর করে দু’দলের মুখ্যমন্ত্রী করার প্রস্তাবও দিতে পারে শিবসেনা। বিজেপির চিন্তা বাড়াচ্ছে কংগ্রেসের ভালো ফলও।
এ বারের ফলে দেখা যাচ্ছে আসন কমছে বিজেপির। কিন্তু শিবসেনা কার্যত তাঁদের আসন ধরে রাখতে পেরেছে। আবার বিজেপি দাবিদাওয়া না মানলে কংগ্রেস-শিবসেনা জোটে সামিল হওয়ার জল্পনাও রয়েছে। ফলে এক দিকে নিজেদের গড় ধরে রাখা, বিজেপির শক্তিক্ষয় এবং বিরোধী শিবিরে সামিল হলে বিজেপির ক্ষমতা হারানোর সম্ভাবনা— এই তিন সমীকরণেই বিজেপির সঙ্গে দর কষাকষিতে শক্তি বাড়াচ্ছেন শিবসেনা নেতৃত্ব।
জাঠভূমে হরিয়ানায় ‘মিশন ৭৫’-এর লক্ষ্যে নেমেছিল বিজেপি। কিন্তু লোকসভা ভোটের ফল বদলে গেল বিধানসভায়। ৬ মাসের মধ্যেই ধরাশায়ী কংগ্রেস রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল বিজেপিকে। সে রাজ্যে বিজেপি এগিয়ে ৩৯টি আসনে। ৩১টি আসনে এগিয়ে কংগ্রেস। ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় কিংমেকার হতে চলেছেন জেজেপি-র দুষ্মন্ত চৌটালা। হরিয়ানায় প্রচারে গিয়ে বড়াই করে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, তিনি হরিয়ানায় আসতে চাননি প্রচারের জন্য। হরিয়ানাই তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। মানুষের ভালোবাসার ডাক ফেলতে পারেননি বলেই গিয়েছেন। কিন্তু বিধানসভা ভোটের জনমত মোদীর সেই দম্ভকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।
মরাঠাভূমে ২৮৮টি আসনে বিজেপি-শিবসেনা জোটের ঝুলিতে এখনও পর্যন্ত গিয়েছে ১৬৩টি আসন। বিজেপি এগিয়ে ৯৮টিতে। শরিক দল শিবসেনা এগিয়ে ৬০টি আসনে, ৪৪টি আসনে এগিয়ে কংগ্রেস। এনসিপি এগিয়ে ৫৬ আসনে। পরিসংখ্যান বলছে, জোট সরকারের ক্ষমতায় আসতে কোনও বাধা নেই। কিন্তু মহারাষ্ট্রে দুর্বল কংগ্রেস ও এনসিপি-র বিরুদ্ধে এহেন ফলের কথা ভাবেননি বিজেপি নেতারাও। সকলেই আশা করেছিলেন, ২০০ আসন পার করে যাবে গেরুয়া শিবির। কিন্তু এখনও মরাঠা মানুষের সমর্থন রয়েছে শরদ পাওয়ারের কাছে। তবে আসন সংখ্যা কমায় শিবসেনার আবদার মানতে একপ্রকার বাধ্য বিজেপি।