বেশিদিনের কথা নয়। বছর দেড়েক আগেই মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন বাম দুর্গের পতন ঘটিয়ে রাজ্যের মসনদে বসেছিলেন বিপ্লব দেব। কিন্তু এরই মধ্যে কী অদ্ভুত ভাবে বদলে গেল ত্রিপুরায় বিজেপির অবস্থা। মূলত সাংগঠনিক দক্ষতার অভাবে এবং নিজের বেফাঁস মন্তব্যের ফলে ক্রমশই কোণঠাসা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। এবার বিপ্লব-গড়ে জোড়া ধাক্কা খেল বিজেপি। একদিকে যেমন দল ভাঙিয়ে ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদ(টিটিএএডিসি) দখলের চেষ্টা ভেস্তে গেল। তেমনি ব্যর্থ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাজ্য বিধানসভা উপ-বিরোধী দলনেতাকে ‘সুস্থ’ প্রমাণের চেষ্টাও। বরং বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অমানবিক প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ উঠেছে।
২০১৮রে ত্রিপুরায় ক্ষমতা দখলের পরই পঞ্চায়েত, নগর পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে বিরোধীদের দখলে থাকা পুরসভা দখল করতে থাকে বিজেপি। অভিযোগ, পেশিশক্তির প্রয়োগ আর প্রলোভন দেখিয়ে গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করে বিজেপি। দেড় বছর পর এবার সেই চেষ্টায় প্রথম ধাক্কা খেল বিজেপি। রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে ষষ্ঠ তফসিল মোতাবেক গঠিত টিটিএএডিসি দখলের চেষ্টা ব্যর্থ হল। ৩০ সদস্যের টিটিএএডিসি-র ২৮ জনই বামফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত। রাজ্যপালের মনোনীত সদস্য রয়েছেন ২ জন। এই ৩০ জনের মধ্যে জয়কিশোর জমাতিয়াকে মহিলা সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির অভিযোগে বহু আগেই সিপিএম বহিষ্কার করে। তিনি যোগ দেন বিজেপিতে।
অভিযোগ, জয়কিশোর এডিসি-র নির্বাহী সদস্য প্রতিরাম ত্রিপুরাকে সঙ্গে নিয়ে খোদ বিপ্লব দেবের নির্দেশে ভাঙার খেলায় নামে। ১৫ জনের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করে নির্বাচিত কমিটিকে খারিজ করার দাবি ওঠে। কিন্তু সিপিএম তাদের দলের ২৩ জন সদস্যকেই মিডিয়ার সামনে হাজির করে জানিয়ে দেয় বর্তমান পরিচালন কমিটিই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এডিসির সিপিএম সদস্যরা অনেকেই সাংবাদিকদের সামনে মন্তব্য করেন, অনাস্থাপত্রে স্বাক্ষরের বিষয়টি তাঁরা জানতেই পারেননি। ফলে ২০২০ সালেমেয়াদ ফুরানোর আগেই বিজেপির এডিসি দখলের ছক ভেস্তে যায় ত্রিপুরায়।
অন্যদিকে, ২০০৮-০৯ অর্থবর্ষের একটি প্রকল্প নিয়ে সেই সময়ের পুর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে বিজেপি সরকারের ভিজিল্যান্স দফতর। আর ৬ দিন ধরে তল্লাশি চালিয়েও তাঁকে ধরতে ব্যর্থ হয়ে ৯ জন পুলিশ কর্তা বরখাস্ত হন। সোমবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত বাদলবাবু ভর্তি হন একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এর আগে দুবার বাইপাস সার্জারি হয়েছে তাঁর। ডায়াবেটিসের সমস্যাও আছে। তাঁর অবস্থা বিবেচনা করেই তাঁকে আইসিইউতে রাখেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। অভিযোগ, এরপরও তাঁকে মঙ্গলবার আইসিইউ থেকে সাধারণ বেডে নিয়ে এসে সুস্থ প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। বুধবার সরকারি হাসপাতালের একটি মেডিক্যাল টিম এসে তাঁকে পরীক্ষা করলে, তাঁদের পরামর্শেই ফের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনাতেও মুখ পুড়েছে গেরুয়া শিবিরের। তাদের বিরুদ্ধে অমানবিক প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগও তুলেছে বিরোধীরা।