মোদী সরকারের আর্থিক নীতিরও দিশা নেই বলে মনে করেন তিনি। তাই মোদী জমানায় দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে দফায় দফায় উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন। আর নোবেল জয়ের পর তো আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল বলে মন্তব্য করে সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। আর এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আদা-পেঁয়াজ-রসুনবিহীন রান্না করে খাওয়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদী জমানায় দ্রব্যমূল্যের আকাশছোঁয়া বৃদ্ধিকে এই ভাবেই কটাক্ষ করলেন তিনি।
সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লীর এক পাঁচতারা হোটেলে প্রকাশিত হয় অভিজিতের বই ‘গুড ইকনমিকস ফর হার্ড টাইমস’। একটি সংবাদমাধ্যম আয়োজিত ‘অফ দ্য কাট’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে অভিজিৎ বলেন, এমন তহবিল তৈরি প্রয়োজন, যা থেকে কাজ হারানো শ্রমিকদের পরের চাকরি পাওয়া না পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। ওই টাকায় কাজ হারানো শ্রমিকদের প্রশিক্ষণেরও বন্দোবস্ত হবে। গতকাল উপস্থিত শ্রোতাদের কিছু প্রশ্নেরও উত্তর দেন অভিজিৎ। অর্থনীতি বিষয়ক আলোচনাতেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতারা নোবেলজয়ী বাঙালিকে ‘বামপন্থী ও পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে কটাক্ষ করে আসছেন। যেমন মোদী সরকারের মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল অভিজিৎকে ‘বাম ঘেঁষা’ আখ্যা দিয়েছেন। গতকাল এর জবাব দিয়েছেন অভিজিৎ। তাঁর কথায়, ‘নিশ্চিত ভাবে আমি ওয়েলফেয়ার লেফট’। অর্থাৎ তিনি কল্যাণরাষ্ট্রে বিশ্বাসী বামপন্থী। বলেছেন, বাম এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যাকে বাদ দেওয়া যায় না। আরও বলেছেন, ‘দেশের বর্তমান সরকার ছাড়া অন্য কারও মনে দক্ষিণ ও বাম নিয়ে কোনও সংশয় নেই।’ সেই সঙ্গেই বলেছেন, ভিন্ন মতের অধিকার রক্ষার জন্য সকলেরই সক্রিয় থাকা উচিত।
গতকালের আলোচনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির দুর্দশার প্রসঙ্গে উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে অভিজিতের মন্তব্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি যখন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তাদের লক্ষ্য থাকে ঋণগ্রহণকারী সংস্থাগুলিকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচানো। কাজেই এই প্রয়াস কখনও শেষ হয় না। কৃষিঋণ মকুবের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার পেছনে সরকারের সুপরিকল্পিত বন্দোবস্ত না থাকাকেই দায়ী করেছেন অভিজিৎ। আবার পঞ্চায়েত স্তরে সরকারি প্রকল্পের আরও বেশি ব্যবহারিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তুলতে পঞ্চায়েতগুলিকে আরও বেশি মানবিক হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন।
অভিজিতের অভিযোগ, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে গিয়ে মোদী সরকার নিজেকে অদ্ভূত অবস্থানে নিয়ে গিয়েছে। চাষিদের সহায়ক মূল্য বাড়ানো হচ্ছে না। অথচ চাষিরা সঙ্কটে পড়লে ‘পিএম-কিষাণ’ প্রকল্পে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। সরকারের আয় বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিজিতের যুক্তি, আজ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে দিলে আগামীকাল তো আর বেচার কিছু থাকবে না। কাজেই এটা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।