মহা সমারোহে শুরু হল ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচকে কেন্দ্র করে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে প্রবল আগ্রহ ছিল। তার অন্যতম কারণ, বাংলা বনাম কেরল দ্বৈরথ। এই দু’টি রাজ্যেই ফুটবল নিয়ে সব চেয়ে বেশি উন্মাদনা। অসংখ্য ফুটবলার উঠে এসেছে বাংলা ও কেরল থেকে। তার উপরে এটিকের কোচ আবার আন্তোনিয়ো লোপেজ় হাবাস। অভিষেকের আইএসএলে যিনি চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন কলকাতাকে। ফলে স্পেনীয় কোচকে নিয়ে প্রত্যাশা তুঙ্গে। কিন্তু কলকাতাবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হল কই! কেরালার বিরুদ্ধে গোল নষ্ট করার মূল্য দিল এটিকে। ম্যাচের ফল কেরালা ২ কলকাতা ১।
ম্যাচ শুরুর ৬ মিনিটের মাথায় এটিকের আইরিশ ফুটবলারের ম্যাকহিউয়ের দুরন্ত গোল ফুটবল সমর্থকরা বহুদিন মনে রাখবেন। পেনাল্টি বক্সের উপর থেকে দুরন্ত ভলিতে গোল ম্যাকহিউয়ের। টিমের তিনি সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার। এ বছরই এটিকেতে যোগ দিয়েছেন। গত বছর পর্যন্ত খেলেছেন আইরিশ ক্লাব মাদারওয়েলে। তাঁর গোলে আইএসএলে ১০০ গোল হল এটিকের।
বৃষ্টিভেজা ম্যাচে বিরতির সময় এটিকে পিছিয়ে ১-২। সেই গোল শোধের জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছিল এটিকে। সময় ছিল জেতারও। কিন্তু স্প্যানিশ কোচ আন্তনিও আবাসের ম্যাচ পরিকল্পনা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কেন ফরোয়ার্ডে খেলা সুসাইরাজকে লেফট ব্যাকে খেলানো হল? কেন প্রবীর দাস নয়? কেরালা যাবতীয় আক্রমণ ওই বাঁ দিকে দিয়েই। প্রথম দু’বছর তিনি এটিকের কোচ ছিলেন। একবার চ্যাম্পিয়ন করেছেন এটিকেকে। কিন্তু সে সময়ও তাঁর টিম পরিচালনা নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে। তবে বাঙালির ফুটবলের আবেগের কথা মনে রেখে প্রথম টিমের চার বাঙালি ফুটবলারকে স্থান দিয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন করেছেন প্রীতম কোটালকে। তারপরে প্রণয় হালদার, প্রবীর দাস ও গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্য। কিন্তু টিমের খেলা দেখে মনে হয়েছে, এটিকের থিঙ্ক ট্যাঙ্কে হোম ওয়ার্কের অভাব রয়েছে। টিমও ভালো করে তৈরি হয়নি। দোষত্রুটি তো রয়েছেই।
খেলার শুরুতেই গোল খেয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল কেরল। রক্ষণে ফুটবলারের সংখ্যা বাড়িয়ে বারবার চেষ্টা করছিল এটিকের ঝড় থামাতে। কলকাতায় কোচিং করিয়ে যাওয়া এলকো সাতৌরির রণনীতি ছিল, আগে হার বাঁচাও, তার পরে জয়ের কথা ভাবা যাবে। ২৪ মিনিটে রয় কৃষ্ণ মাঝমাঠ থেকে বল ধরে দ্রুত গতিতে কেরলের বক্সে ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু সামনে একা গোলরক্ষককে পেয়েও অবিশ্বাস্য ভাবে বল বাইরে মারল। দু’মিনিট পরে মাইকেল সুসাইরাজও বল নিয়ে কেরল বক্সে ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু তাকে ফাউল করে সের্খিয়ো সিদোঞ্চা। টেলিভিশনে বারবার রিপ্লে দেখে মনে হচ্ছিল, পেনাল্টি ছিল। যদিও রেফারি এটিকে ফুটবলারদের দাবি খারিজ করে দেন।
রয় কৃষ্ণের অবিশ্বাস্য ভাবে গোল নষ্ট। তার পরে এটিকের পেনাল্টির আবেদন খারিজ। এই দু’টো ঘটনা যেন কেরল ফুটবলারদের উজ্জীবিত করে দিল। ওরা ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করল। রক্ষণ সামলে প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলতে শুরু করল হোলিচরণ নার্জারি, প্রশান্ত কারুথাদাথকুনিরা। ৩০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা ফেরাল বার্তোলোমেউ ওগবেচে। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে নিজের দ্বিতীয় গোল করল ও। নাইজেরিয়ার জাতীয় দলের প্রাক্তন স্ট্রাইকার ওগবেচে শুধু দু’টো গোলই করল না, পুরো দলটাকেও খেলাল।
কাল কেরালা দারুণ সুসংবদ্ধ ভাবে খেলেছে। এটিকের পেনাল্টি বক্সে যেন বনগাঁ লোকালের ভিড়। গায়ে গায়ে ফুটবলার দাঁড়িয়ে। এক জন মিস করলে, অন্য জন ধরে ফেলছে। এ ভাবেই প্রথমার্ধের শেষদিকে ওগবেচের গোল করে গেলেন। নাইজিরিয়ান এই স্ট্রাইকার গত বছর ছিলেন নর্থইস্টে। ১৮ ম্যাচে ১২ গোল করেছিলেন। কোচ ছিলেন এলকো শাতোরি। সেই শাতোরির হাত ধরে ওগেবেচের কেরালায়। প্রথম ম্যাচে তিনি নিজের জাত চেনালেন। ম্যাচের সেরাও হলেন।
গ্যালারি ভর্তি দর্শক। প্রত্যেকের গায়ে কেরালা হলুদ জার্সি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সর্ষে খেত। যা দেখে বিরতির সময় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান এটিকের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। বলে দিলেন, ‘ভারতীয় ওয়ান ডে টিমের প্রথম ক্যাপ্টেন্সি করেছিলাম এই মাঠেই। সে দিন এই ভিড় দেখেছিলাম। আজ ফুটবলে দেখলাম। আমার দারুণ লাগছে। ভারতীয় ফুটবল বেশিদিন আর পিছিয়ে থাকবে না।’
এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টাইগার শ্রফ ও দিশা পাটানির নাচে গ্যালারি অবশ্য দুলে উঠল। কেরালার গোলে দুলে উঠেছে গ্যালারি। কিন্তু এটিকে টিমটাই দুলে উঠল না। দেখা গেল না জ্বলে উঠতেও।
প্রথম ম্যাচে হারলেও তবে এখনই এত হতাশ হচ্ছেন না কেউ। সবে প্রথম ম্যাচ খেলল এটিকে। এর পরে নির্বাসন কাটিয়ে মাঠে ফিরবে জবি জাস্টিন ও আনাস এডাথোডিকা। আশা করা যায় কৃষ্ণ-জবি যুগলবন্দিতে ফের চেনা মেজাজে দেখা যাবে এটিকে-কে।