জিয়াগঞ্জ কান্ডে আততায়ীকে ঠিক একঝলকই দেখেছিলেন পালবাড়ির দুধবিক্রেতা। তাকে সে যে আততায়ী তা বুঝতেও পারেননি তখন। দুধ নিতে বাড়ির কেউ বাইরে আসছেন না দেখে প্রথমে ফোন করেছিলেন গৃহকর্ত্রীর মোবাইলে। ফোন না ধরায় জানলা দিয়ে উঁকি মেরেছিলেন ঘরে। ভেতরে তাকিয়ে হাড়হিম হয়ে গিয়েছিল তাঁর। দেখেছিলেন বাড়ির শোওয়ার ঘরের খাটের উপর পড়ে রয়েছে বন্ধুপ্রকাশবাবুর দেহ। মেঝেতে তাঁর ছ’বছরের ছেলের রক্তাক্ত দেহ। আর পাশের ঘরের একটি খাটের উপর পড়ে রয়েছে বন্ধুপ্রকাশবাবুর স্ত্রী বিউটির ক্ষতবিক্ষত দেহ।
গোটা রাজ্যজুড়ে সাড়া ফেলে দেওয়া এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে ওই বাড়ি থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করে পুলিশ। যার একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল বিভিন্ন কোম্পানির পলিসির কাগজ আর রসিদ। যা থেকে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, শিক্ষকতা ছাড়াও আরও একটি পেশা ছিল গোসাঁইগ্রাম সাহাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পালের। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও আর্থিক কোম্পানির এজেন্সি ছিল তাঁর।
তদন্তে নেমে পালবাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বিউটি পালের ফোনের ডিটেলস থেকে তাঁরা জানতে পারেন বারোটা বেজে তিন মিনিটে শেষ হোয়াটসঅ্যাপটি করেছিলেন বিউটি। বারোটা বেজে ছ’ মিনিটে শেষ ভিডিও কল করেছিলেন পরিচিত একজনকে। আর বারোটা বেজে এগারো মিনিটে দুধ দিতে গিয়ে বাড়িতে কাউকে না পেয়ে বিউটির মোবাইলে ফোন করেছিলেন দুধওয়ালা। পুলিশ সুপার বলেন, “অর্থাৎ এই পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ঘটে খুনের ঘটনা। তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে একজন বেরিয়ে গিয়েছিল বলে খুনের দিনই পুলিশকে জানিয়েছিলেন ওই দুধ বিক্রেতা।”
মুর্শিদাবাদের পুলিশসুপার শ্রী মুকেশ বলেন, “বন্ধুপ্রকাশের স্কুলের অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পারি স্কুলে বেশিরভাগ সময়েই মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন তিনি। এমনকি ক্লাসে পড়ানোর সময়েও ফোন আসত তাঁর। অর্থাৎ এই পেশা নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলেন তিনি। আমাদের তদন্তের অভিমুখ অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে যায় সেই তথ্য জানার পরে”।
রবিবার সকালে উৎপল আর ওর বাবাকে থানায় ডেকে পাঠিয়ে কথা বলে পুলিশ। বিকেলে আবার ডেকে পাঠানো হয় তাকে। সোমবার ফের তাকে ডেকে পাঠানো হয় থানায়। পুলিশের জেরায় উৎপল দশমীর দিন সাগরদিঘিতে থাকার কথা বললেও তার মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়, সে দিন জিয়াগঞ্জে এসেছিল সে। জেরার মুখে ভেঙে পড়ে উৎপল খুনের কথা কবুল করে বলে পুলিশসুপার দাবি করেন।
উৎপল জানায়, বিমার প্রিমিয়ামের জন্য তাঁর কাছ থেকে ২৪ হাজার টাকা নিলেও কোনও রসিদ দিচ্ছিলেন না বন্ধুপ্রকাশ। বারবার চেয়েও রসিদ না পাওয়ায় তার ধারণা হয় প্রিমিয়ামের টাকা জমা দেননি তিনি। তাই টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়ার কথা বলেন তাঁকে। তাতেও রাজি হননি বন্ধুপ্রকাশ। এই নিয়ে দুজনের তর্কবিতর্ক হলে বন্ধুপ্রকাশ তাকে গালিগালাজ করে বলে অভিযোগ উৎপলের । সেই রাগেই ওই শিক্ষককে খুনের সিদ্ধান্ত নেয় সে।