এনআরসির জেরে আসামে এক ধাক্কায় ঘরছাড়া হয়েছেন ১৯ লক্ষ মানুষ। এবার বাংলাতেও এনআরসির হুঙ্কার ছেড়েছে বিজেপি। যদিও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই এনআরসির কড়া বিরোধিতা করেছেন। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন নথি না থাকার আতঙ্কে। এবার আসানসোল নিবাসী এক বৃদ্ধা এনআরসি ভয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারালেন।মৃত ওই বৃদ্ধার নাম উমারানি মুখোপাধ্যায় (৬৪)। তিনি চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দা। সেখানে পাঁচের পল্লির সেভেন মার্কেট এলাকায় তিনি থাকতেন।
দিনকয়েক ধরে টেলিভিশন আর সংবাদপত্রে এনআরসি নিয়ে প্রকাশিত খবর ও আলোচনায় তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বলে পরিবার জানিয়েছে। তাঁর রক্তচাপও বেড়ে গিয়েছিল। শনিবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চিত্তরঞ্জন থেকে সালানপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু পরিজন আসানসোলে না গিয়ে পার্শ্ববর্তী জামতাড়া সদর হাসপাতালের চিকিৎসককে দেখান। সঞ্জয় কুমার নামে সেই চিকিৎসক জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন উমারানি।
মৃত উমারানির বোনপো সুব্রত সাহা বলেন, ‘আমরা কোনও মতে এখানে সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালাই। এনআরসি নিয়ে আলোচনার পর থেকেই মাসির আতঙ্ক বেড়ে গিয়েছিল। প্রেসারও যথেষ্ট বেড়েছিল। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ, বীরভূমে এনআরসি আতঙ্কে একাধিক মানুষের মৃত্যুর খবরে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। প্রায়ই হতাশার সুরে বলতেন, অসমে যারা হিন্দু বাঙালি তাদেরও নাগরিকত্ব দেওয়া হল না!’
দুশ্চিন্তার আরও কারণ ছিল উমারানির। তাঁর ভোটার কার্ড থাকলেও আধার কার্ড ছিল না। সুব্রত বলেন, ‘আধার কার্ড করাতে গেলে সারারাত লাইন দিতে হচ্ছে। মাসির আতঙ্কের বড় কারণ ছিল, ভোটার কার্ডে জন্মের তারিখ লেখা ছিল না। কেবল বয়স লেখা রয়েছে। মাসির জন্মের সার্টিফিকেটও ছিল না। মাসির মাথায় ঢুকে গিয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছে, তাদের এ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’
এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চিত্তরঞ্জন রেল শহরে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এমনিতেই রেল শহর গড়ে ওঠার সময় থেকে বহু রাজ্যের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ চিত্তরঞ্জন ও পার্শ্ববর্তী রূপনারায়ণপুরে বসবাস শুরু করেন। তাঁদের মধ্যেও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
তৃণমূলের শ্রমিক নেতা ইন্দ্রজিৎ সিং এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘উনি এনআরসি নিয়ে আতঙ্কিত ছিলেন। আমরা ওঁকে একাধিকবার বলেছিলাম, এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলছেন, ভয় পাবেন না। কিছু হবে না। আমরা আপনার আধার কার্ড করিয়ে দেব। কিন্তু এরই মধ্যে এমন ঘটনা ঘটে গেল।’ বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় বলেন, ‘এনআরসি নিয়ে কেউ আতঙ্কিত হবেন না। পরিচিতিপত্রে যার যে সমস্যা রয়েছে, আমাদের স্থানীয় নেতা, বিডিও অফিস অথবা পঞ্চায়েত দপ্তরে যোগাযোগ করুন। সমস্যা মিটে যাবে।’