বিসিসিআইয়ের পরবর্তী সভাপতি হতে চলেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিল করার শেষ দিন। রবিবারই তা জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সৌরভ।বোর্ডের সভাপতি পদে লড়াইটি মূলত ছিল সৌরভ ও শ্রীনিবাসন ঘনিষ্ঠ ব্রিজেশ প্যাটেলের সঙ্গে। কোনও কোনও মহলের ধারনা ছিল ব্রিজেশই শেষপর্যন্ত সভাপতি নির্বাচিত হচ্ছেন। এনিয়ে জোরদাল লবি করাও শুরু হয়ে যায়। সেই জল্পনায় জল ঢেলে দিলেন সৌরভ।
ক্রিকেটার সৌরভ বরাবরই হার না মানা মনোভাবের ছিলেন। কে জানত, অবসরের এত বছর পরে প্রশাসক সৌরভও ফিরিয়ে আনবেন ক্রিকেটার সৌরভের সেই ছবি! আর তা-ও কি না ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে তাঁর জীবনের সব চেয়ে বড় ‘ম্যাচে’! রবিবার মুম্বইয়ে বোর্ডের বেসরকারি সভায় নতুন প্রেসিডেন্ট হওয়ার ব্যাপারে প্রথমে তিনিই ছিলেন ফেভারিট। তার পরে হঠাৎই সম্ভাবনা মিলিয়ে যাওয়া শুরু। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ সভার মধ্যে থেকে খবর বেরিয়ে পড়ে যে, সৌরভের আর কোনও আশা নেই। তিনি প্রেসিডেন্ট বা সচিব কিছুই হচ্ছেন না। নতুন বোর্ডে নতুন প্রেসিডেন্ট হবেন এন শ্রীনিবাসন সমর্থিত ব্রিজেশ পটেল। তিনিও প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থার প্রধানের পদ দীর্ঘদিন ধরে সামলেছেন।
প্রায় হেরে যাওয়া লড়াই হঠাৎই সৌরভ বাঁচিয়ে তোলেন এগারোটা নাগাদ। মুম্বই থেকে হঠাৎই ফোনে খবর আসে যে, ক’দিন আগে লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনালের মতোই টানটান উত্তেজনার ‘ম্যাচ’ গিয়েছে সুপার ওভারে। বোর্ডের প্রভাবশালী মহল নাকি ফের চিন্তাভাবনা শুরু করেছে প্রেসিডেন্ট পদ নিয়ে। প্রথমে আপত্তি তোলেন বোর্ড সদস্যরা। তিরিশটি সংস্থা বোর্ডের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ছাড়পত্র পেয়েছে। সেটা সরকারি সভা মানে ২৩ অক্টোবরের বৈঠকের হিসেব। এ দিনের বেসরকারি সভায় লোঢা সংস্কার অনুযায়ী কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। তাই তিরিশটি সংস্থা ছাড়াও অনেক প্রতিনিধি হাজির ছিলেন। উপস্থিত সদস্যদের গরিষ্ঠ অংশ প্রথমে আপত্তি তুলতে শুরু করে যে, ব্রিজেশের চেয়ে সৌরভ অনেক যোগ্য প্রার্থী। একে তো অনেক বেশি ক্রিকেট খেলেছেন, কোনও তুলনাই চলে না। তার উপরে প্রশাসক হিসেবে ব্রিজেশের অভিজ্ঞতা বেশি হলেও সৌরভও পাঁচ বছর ধরে সিএবি-র দায়িত্ব সামলেছেন। খুবই আকর্ষণীয় প্রার্থী। তাঁকে প্রেসিডেন্ট বেছে নেব না আমরা?
তার পরেই আসরে ফেরেন সৌরভ এবং রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ইডেনে ফলো-অন করে স্টিভের অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর মতোই অভাবনীয় ভাবে তাঁর নামই প্রেসিডেন্ট হিসেবে চূড়ান্ত হয়ে যায়।
এমনও শোনা যাচ্ছিল যে, সৌরভকে ভাইস প্রেসিডেন্ট অথবা আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এবং, ক্ষুব্ধ তিনি সেই পদ গ্রহণ করতে রাজি হননি। গুরু গ্রেগ চ্যাপেলের বিধান পেয়ে বাদ গিয়েও ফিরে আসার মতো যে এর পর মহাবিক্রম দেখিয়ে সৌরভ ফিরবেন, কে ভাবতে পেরেছিল! ডিনারে যাওয়ার তোড়জোর শুরু হচ্ছে, এই অবস্থা থেকে ঘটে পুরনো সেই সৌরভীয় প্রত্যাবর্তন! প্রায় বোল্ড হয়ে গিয়েও বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যত প্যাড পরা শুরু করে দিয়েছেন সৌরভ। আর ব্রিজেশ হচ্ছেন আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের নতুন চেয়ারম্যান।
আপাতত দশ মাসের জন্যই ক্রিজে থাকবেন সৌরভ। তার পর চলে যেতে হবে বাধ্যতামূলক ‘কুলিং অফে’। সে যখন হবে, দেখা যাবে। এখনকার মতো বঙ্গ ক্রিকেট মহল তো বটেই, আরব সাগরের উথালপাতাল ঢেউ আছড়ে পড়তে শুরু করেছে গোটা দেশে। অধিনায়ক হিসেবে যাঁর হাত ধরে ম্যাচ গড়াপেটার কালো অধ্যায় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট, তিনি এ বার বোর্ডের নতুন রাজা।