চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মামলা, আবার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে চিঠি। সমাজের বুদ্ধিজীবীরা দেশে বাড়তে থাকা গণপিটুনি, অসহিষ্ণুতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে একটি খোলা চিঠি দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলায় চিঠিতে নাম থাকা ৪৯ জনের নামে দেশদ্রোহিতার মামলা হয়েছে বিহারের মজফফরপুরে। সোমবার তারই প্রেক্ষিতে আরও একটি খোলা চিঠি লেখেন বিদ্বজ্জনেরা। এবার সংখ্যাটা ১৮০। তাঁরা স্পষ্ট করে জানতে চান, প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা কীভাবে দেশদ্রোহিতার শামিল হয়?
তাই নিয়ে এই স্বনামধন্যদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার চলছেই। যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন, তাঁদের একজন নাসিরুদ্দিন শাহ। অবস্থানে অনড় তিনি। গণপিটুনির প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, সমাজে খোলাখুলি এমন হিংসা তাঁকে বিচলিত করে। গত বছর বুলন্দশহরে গো–হত্যার গুজবকে কেন্দ্র করে এক পুলিশ আধিকারিকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে একইরকম সরব ছিলেন নাসির। বলেছিলেন, নিহত পুলিশ আধিকারিকের থেকে গরুর মৃত্যুই যেন বেশি উদ্বেগের। এ–ও বলেছিলেন, তাঁর আধা হিন্দু–আধা মুসলিম সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত। তাতে টুইটারের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী রে রে করে তেড়ে আসে।
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে নাসির বলেছেন, ‘যাদের আদৌ কোনও কাজ নেই, এমন লোকজনের গালাগাল ঢের সহ্য করেছি।’ তার জন্য কী কাজও হারিয়েছেন? তাঁর কথায়, ‘কোনওদিনই চলচ্চিত্র জগতের কারোর সঙ্গে তেমন ওঠাবসা ছিল না। সুতরাং আমার মতামতের জন্য তেমন কাজ পাচ্ছি না, এ কথা বলতে পারব না। তবে যা বিশ্বাস করি, তা অটুট থাকবে।’
কবি–গীতিকার জাভেদ আখতার খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে নেই। তবে নাসিরদের পাশে থেকে তাঁর বক্তব্য, কোনও অবস্থাতেই খোলাখুলি মত প্রকাশ বন্ধ হওয়া কাম্য নয়। কারণ, গণতন্ত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা যায় না। জাভেদ বলেছেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললে, তারা কি পছন্দ করবে? আমার তো মনে হয় না। এমন কোনও সরকার আছে, যারা নিন্দা শুনে খুশি হবে। তা সত্ত্বেও স্পষ্ট মত দেওয়া উচিত।’
যোগ করেছেন, ‘আমাদের নিজেদের ভাগ্যবান মনে করা উচিত যে আমরা ভারতের মতো গণতন্ত্রে বাস করি। এখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলবৎ আছে। তাই নিয়ে আপস করা চলে না। কারণ, এশিয়ার অনেক দেশের নাগরিকদের এই অধিকার নেই।’ দেশের যে একনায়ককতন্ত্র প্রথা চলছে তা এক প্রকার হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন দেশের সমাজ সচেতকরা।