গত ৫ আগস্ট সংসদে ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজের ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বিল পাশ করিয়ে কাশ্মীর থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করার ঘোষণা করেন তিনি। তারপর দু’মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এতদিনে পরিস্থিত স্বাভাবিক হওয়া তো দূর, বরং দেখা দিয়েছে উল্টো সঙ্কট। কাশ্মীরে বস্তুত জনতা কার্ফু চালু রয়েছে। আর সেটাই চরম উদ্বেগ তৈরি করেছে।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে এবার কাশ্মীরের প্রথম সারির প্রতিটি সংবাদপত্রে সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করে বলতে হচ্ছে যে, এভাবে দোকানপাট, ব্যবসাকেন্দ্র বন্ধ রেখে, স্কুল কলেজ বয়কট করে আদতে কাদের সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছে? আমরা কি সন্ত্রাসবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করব? এটাই তো সন্ত্রাসবাদীরা চায় যাতে কাশ্মীরের স্বাভাবিক অবস্থা আর ফিরে না আসে। কাশ্মীরকে পিছনে ফেলে রাখতেই উদ্যোগী তারা। সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করা হচ্ছে, তারা যেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
এই অদ্ভুত পরিস্থিতিতে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে সরকার। কারণ, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে দেওয়ার ঘোষণার পর সরকারই কার্ফু থেকে ফোন সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া এবং রাস্তাঘাট নিয়ন্ত্রণ করে একপ্রকার জনজীবন স্তব্ধ করে দিয়েছিল। স্থানীয় নেতাদেরও বন্দী করে রাখা হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, দু’মাসে কোনওরকম প্রকাশ্য গোলমালই হয়নি। উল্টে মনে ভয় বাসা বেঁধেছে কাশ্মীরের বাসিন্দাদের। যার ফলে স্কুল কলেজে পড়ুয়া নেই। বেসরকারি সংস্থার অফিস খুলছে না। দোকানপাট, হোটেল- সবই বন্ধ।
উল্লেখ্য, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ নং অনুচ্ছেদ যেদিন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল, সেদিন থেকে লাগাতার কাশ্মীরবাসীকে গৃহবন্দী থাকার জন্যই আবেদন করেছিল সরকার। দিনভর কার্ফু, রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড। জনজীবন ছিল স্তব্ধ। আর আজ সরকার কাশ্মীরবাসীর কাছেই বিজ্ঞাপন দিয়ে আবেদন করছে গৃহবন্দী হয়ে না থেকে, সকলে যেন বাইরে এসে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করে। কিন্তু কাশ্মীরবাসী নীরব হয়ে এখনও গৃহবন্দী রেখেছেন নিজেদের। যার ফলে এখন বেজায় চাপে পড়েছে মোদী সরকার।
অন্যদিকে, এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা যে বলে আসছেন— মানুষ উন্নয়নের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, কাশ্মীরে সব স্বাভাবিক? জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের ৬৭ দিন পরে, তা হলে কেন প্রশাসনকে বলতে হচ্ছে, সবাই স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করুন? আর যদি এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টাই চলছে, তাহলে এ হেন অচলাবস্থা তৈরি করা হয়েছিলই বা কেন? মুখে কুলুপ সরকারের।