তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র উৎসব সংখ্যায় নিজের কলামে ত্রিপুরার প্রসঙ্গ তুলে একযোগে বিজেপি ও বামেদের বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলছুটদের পরিণতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরে পদ্ম শিবিরে ঝুঁকে থাকা দলীয় নেতা-কর্মীদেরও সতর্ক করেছেন দলনেত্রী তাঁর ‘কিছু কথা, কিছু ব্যথা’ শীর্ষক নিবন্ধে।
বিজেপিকে পরোক্ষে মদত জোগানোর অভিযোগে সিপিএমকে বিঁধেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘ত্রিপুরায় গণতন্ত্র কাঁদছে। মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমি বিস্মিত সিপিএমের বন্ধুদের দেখে। তাঁরা ত্রিপুরা নিয়ে নীরব। রাজ্যটা বিজেপির হাতে তুলে দিয়ে চুপ করে বসে আছে। কোনও আন্দোলন নেই। কোনও প্রতিবাদ নেই। যত রাগ আমাদের মা-মাটি-মানুষের সরকারের উপর। যাদের ত্রিপুরা অভিযান করার কথা, তারা করছে নবান্ন অভিযান। লোকসভা ভোটে নিজেদের ভোট ট্রান্সফার করে দিল বিজেপিকে। হার্মাদরা হয়ে গেল বিজেপির সম্পদ’।
বিজেপি বিরোধিতার পাশাপাশি বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধেও লড়াইয়ের ডাক দিয়ে লোকসভা ভোটে লড়েছিল বামফ্রন্ট। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, এতে ভোটে মেরুকরণের কাজ সহজ হয়ে গিয়েছিল। যার ফায়দা তুলেছে বিজেপি। মমতার ব্যাখ্যা, বাংলায় বিজেপির আছেটা কী? সিপিএমের উদ্দেশ্যে তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘মুখে বড় বড় কথা আমরা বামপন্থী। যদি সত্যি তাই হতেন, তাহলে ত্রিপুরা নিয়ে পথে নামতেন। দিল্লীতে প্রতিবাদ করতেন। আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে নাটক করতেন না।’ মমতার বিশ্বাস, ত্রিপুরার মানুষ বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে বাংলার মতো তৃণমূলকেই ক্ষমতায় বসাতে চেয়েছিল। কিন্তু যাদের হাতে সেখানকার সাংগঠনিক দায়িত্ব তিনি দিয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসঘাতকতা করে পদ্ম শিবিরে নাম লিখিয়েছে। তৃণমূল নেত্রী স্বীকার করেছেন, বাংলার লড়াই নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ত্রিপুরায় দলের জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজে নজর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই বাম শাসনে অতিষ্ঠ ত্রিপুরাবাসীকে বিজেপি গ্রাস করতে পেরেছে বলে মনে করেন মমতা। ত্রিপুরার গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের ৮৬ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি বলে বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন মমতা। বাকি ১৪ শতাংশ আসনেও সুযোগ বুঝে লুট হল গণতন্ত্র। অথচ সিপিএম চুপ করে রয়েছে। তাঁর ইঙ্গিত, এটাও পরোক্ষে বিজেপির প্রতি নমনীয়তার লক্ষণ।
ত্রিপুরায় তো বটেই, কিছু মানুষ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন এরাজ্যেও। এই প্রসঙ্গ তুলে মমতার ইঙ্গিতপূর্ণ হুঁশিয়ারি, ‘লোভ দেখানো হয়েছিল তাদের। এখন বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর তাদের আর কোনও গুরুত্ব নেই। পুরোটাই আরএসএসের দখলে। বিজেপির সঙ্গে গেলে কী হয়, তার উদাহরণ ত্রিপুরা’।