বিশাখাপত্তনমের মতোই আক্রমণাত্মক মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে চায় টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো? আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তবু কোহলি ব্রিগেড পুনেতে সিরিজ পকেটে ভরতে মরিয়া। শুধু বৃষ্টির চোখ রাঙানি নয়, আলোচনার কেন্দ্রে আছে পুণের বিতর্কিত পিচও।
শেষ আটচল্লিশ ঘণ্টায় পিচকে কেন্দ্র করে নানা নাটক দেখে নেওয়া গেল। মঙ্গলবার থেকে যতটা সবুজ মনে হচ্ছিল, তার অনেকটাই উধাও হয়ে গিয়েছে বুধবার। হেড কোচ রবি শাস্ত্রীকে দু’একবার কথা বলতে দেখা গেল পিচ প্রস্তুতকারকের সঙ্গে। যদিও শাস্ত্রী এবং বিরাট কোহালি জোর দিয়ে বলছেন, পিচের চরিত্র নির্ধারণে তাঁরা হস্তক্ষেপ করবেন না। মঙ্গলবার দলের বোলিং কোচ বি অরুণ এমনকি, এমনও বলে যান যে, ‘‘নিজেদের সুবিধা মতো পিচের চরিত্র ঠিক করে নেওয়া বিশ্বের এক নম্বর দলের পক্ষে শোভা পায় না।’’ তা বলে ঘরের মাঠে ভারত খেলবে আর বাইশ গজে সবুজ ভাবও থাকবে, সেটাও যে অপ্রত্যাশিত। যত বিতর্কই তাড়া করুক না কেন, পুণেতে তাই স্পিন-বন্ধু পিচের বাইরে অন্য কিছু কেউ আশা করছে না।
তবে এ বার আইসিসি টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের নতুন নিয়ম অনুযায়ী খারাপ পিচ হলে ভুগতে হতে পারে আয়োজক দেশকে। যদি পিচকে খেলার অযোগ্য মনে করে আইসিসি এবং ম্যাচ ভেস্তে যায়, সে ক্ষেত্রে আয়োজক দেশের পয়েন্ট কেটে নেওয়া হবে। আইসিসি-র নতুন এই নিয়ম নিয়ে উচ্ছ্বসিত দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসি। পুণেতে মঙ্গলবারই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন নিয়ম সত্যিই আকর্ষণীয়। আগে খারাপ পিচ বানানো হলে আয়োজক দেশকে সতর্ক করা হত। এখন পয়েন্টও কাটা হবে।’’ এই নিয়মের চাপে কোনও দলই ঘরের মাঠে পিচকে খুব বিকৃত করার ঝুঁকি নেবে না।
তবে যাই হোক না কেন, ভারতীয় শিবিরে উঁকি মারলেই আত্মবিশ্বাসের ছবিটা ধরা পড়বে। প্রথম টেস্টে দুর্দান্ত জয় একটা কারণ হলে দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই ক্রিকেটারদের ফর্ম। প্রথম টেস্টে ‘শেহবাগ মডেল’ দারুণ কাজে দিয়েছে। দু’ ইনিংসেই রোহিত শর্মার সেঞ্চুরি। মায়াঙ্ক আগরওয়ালের জীবনের প্রথম দ্বিশতরান। অশ্বিন, জাদেজারা সাফল্য পেয়েছেন।
ফর্মে মহম্মদ সামিও। বিশাখাপত্তনমে প্রথম ইনিংসে সামির বোলিং দেখে অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে কিন্তু বাংলার বোলার একাই বিধ্বস্ত করে দিয়েছিলেন প্রোটিয়াদের। এই জোরে বোলারের ওপর ক্যাপ্টেন কোহলির যে বাড়তি ভরসা আছে, তাঁর কথাতেই তা বোঝা গেছে। দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামার আগে কোহলি বলেছেন, ‘সামি নিজে থেকেই এখন অনেকটা দায়িত্ব নিচ্ছে। ওকে উদ্দীপ্ত করার প্রয়োজন হয় না। কাম অন, তোমাকে দলের জন্য এই স্পেলে জ্বলে উঠতে হবে— এসব বলার দরকার হয় না। ও নিজেই বল চেয়ে নেয়। যখন ওর হাতে বল তুলে দেওয়া হয়, তখন পরিস্থিতিটা বোঝে।’ পাটা উইকেটেও সামির সিম করানোর দক্ষতায় মুগ্ধ কোহলির কথায়, ‘যে উইকেটে বোলারদের জন্য কিছু থাকে না, সেখানেও সামির মতো অন্য কোনও বোলারকে সিম করাতে দেখিনি। যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলানোর দক্ষতা রয়েছে। বিশেষত, দ্বিতীয় ইনিংসে যখন পরিস্থিতি কঠিন থাকে, সামি এসে রং বদলে দেয়।’
বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও টিম কম্বিনেশন বদলের পরিকল্পনা নেই ভারতীয় শিবিরের। তৃতীয় জোরে বোলার খেলানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিয়ে কোহলি বলেছেন, ‘দল থিতু হয়ে গেছে। পরিবর্তনের খুব একটা সম্ভাবনা নেই। পিচ বড় ফ্যাক্টর হবে না। উইকেট স্যাঁতসেঁতে হলেও জোরে বোলাররা যেমন সাহায্য পাবে, তেমন বল ঘুরবেও। স্পিনাররাও সাহায্য পাবে। উইকেটে পুরো ঘাস থাকলে টিম কম্বিনেশন নিয়ে চিন্তাভাবনা করতাম।’ টিম কম্বিনেশনের জন্যই প্রথম একাদশে সুযোগ পাচ্ছেন না কুলদীপ যাদব। তাঁর বিষয়ে কোহলি বলেন, ‘দলে কারও জায়গা নিশ্চিত নয়। সবাই জানে দলের জন্য সে কী করতে পারি। কুলদীপও তাই। ও জানে ব্যাটিংয়ে অশ্বিন আর জাদেজা দলকে অনেক সাহায্য করে বলেই ওরা প্রথম পছন্দ।’